অদৃশ্য এক অটুট বন্ধনের নাম বন্ধুত্ব। জীবনে চলার পথে যার গুরুত্ব কিছু ক্ষেত্রে অন্য সম্পর্কগুলোও ছাপিয়ে যায়। না বলা কতশত কথা একমাত্র এ বন্ধু নামক বাক্সেই বন্দি রাখা যায় বিনা দ্বিধায়। জীবনের নানা ধাপে পরিচয় হয় নতুন মুখের সঙ্গে। ধীরে ধীরে সম্পর্কের রঙ্গে পূর্ণতা আসে। আস্থার জায়গা তৈরি হয় অল্প অল্প করে, এর পর তা চোখের পলকেই বদলে যায় নতুন এক সম্পর্কে।
তাই তো বয়সের কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই বন্ধুত্বের মাঝে। আপনাকে যে সবচেয়ে ভালো বুঝতে পারে, যাকে নিজের মাঝে লুকিয়ে রাখা কথাগুলো অকপটে জানানো যায়, যাকে খুব মন খারাপে আপনি খোঁজেন সেই আসলে আপনার বন্ধু। জীবনের ভালো সময়ে আপনি অনেককেই আশপাশে পাবেন কিন্তু আপনি যখন খারাপ সময়ের মাঝে আছেন তখন এ বন্ধু নামক সম্পর্কগুলোই আপনাকে নতুন করে বাঁচতে শিখাবে।
এ ছাড়া আপনাকে মানসিকভাবেও এ বন্ধুই সাহস জোগাবে সবচেয়ে বেশি, কিছু ক্ষেত্রে আপনার নিজস্বতায় পরিবর্তন আনতে অনেকখানি ভূমিকা রাখে এ বন্ধুরা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিক্ষাজীবনের অধ্যায়ে বন্ধুদের সঙ্গে কাটাতে হয় লম্বা একটা সময়। একসঙ্গে গ্রুপ স্টাডি কিংবা প্রেজেন্টেশন সব বিষয়েই আপনাকে সব সময় ব্যস্ত থাকতে হয় এদের সঙ্গেই।
তবে সব সম্পর্কের মাঝে যেমন আছে ভালো খারাপ দিক তেমনি বন্ধুত্বের ক্ষেত্রেও আছে। কিছু মানুষ আপনার জীবনে আসবে বন্ধুত্বের জায়গা করে নিতে কেবল নিজের স্বার্থে। অপরদিকে কিছু মানুষ কেবল আপনাকে ভালোবেসেই আসবে আপনার জীবনে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিতে। তাই জীবনের চলার পথে বন্ধুর হাত কখনো ছুটে যাবে, আবার সেই হাত শক্ত করে হয়তো কেউ ধরবে পূর্ণতা নিয়ে আসতে। অন্যদিকে এর উলটোও হয়ে থাকে এ টক মিষ্টি সম্পর্কে। অযথাই ভুল বোঝাবুঝি বন্ধুত্বের সম্পর্কের এক অংশ। তাই মনের অমিল যেমন এ সম্পর্কের টক এক অংশ আবার খুব সহজে মিলে যাওয়াও এ সম্পর্কের মিষ্টতা। বন্ধুত্বের এ সময়টা হয়ে থাকে রঙিন।
হঠাৎ পরিকল্পনা এর পর বেরিয়ে পড়ার মতো সিদ্ধান্ত বন্ধুদের ছাড়া অসম্ভব। জীবনের এ একটা অংশে আপনি নিজেকে মেলে ধরতে পারবেন ভিন্ন রূপে। কখনো সাগর পাড়ে হারিয়ে যাওয়া আবার কখনো পাহাড়ে চড়ার মতো অ্যাডভেঞ্চার কেবল খুঁজে পাওয়া যাবে এ সম্পর্কের আড়ালেই। জীবনের ভিন্ন ভিন্ন অধ্যায়ের বন্ধুত্বের স্বাদ ভিন্ন ভিন্ন। শৈশব কিংবা কৈশোর, ধীরে ধীরে পালটাতে থাকে মানুষের মুখগুলো বন্ধুত্বের পরিধি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে।
এর পর যখন বয়সের সংখ্যা বাড়তে থাকে কেন যেন কমতে শুরু করে বন্ধুত্বের সংখ্যা। মুখগুলো কেবল স্মৃতির পাতায় আটকা পড়ে থাকে ডিজিটাল এ সময়ের সঙ্গে। যেখানে জীবনের শেষ দিন অবধি বন্ধুর হাতে হাত রেখে ঘুরতে যাওয়া, গল্প করা কিংবা গান শোনার মতো অভিজ্ঞতাগুলো নেওয়া সম্ভব, সেখানে হারিয়ে যাওয়া মুখগুলো ভাসতে থাকে চোখের সামনে। তাই বন্ধুত্বের সম্পর্ককে করুন আরও মজবুত। জীবনের প্রথম বন্ধু থাকুক শেষ দিন অবধি।
যাকে খুলে বলা যাবে মনের যে কোনো কথা। যাকে করা যাবে নিজের সঙ্গী, যাকে কেবল সুখের দিনে না দুঃখের দিনেও আগলে রাখা যাবে সবকিছু থেকে। বন্ধুত্বের বন্ধন হোক এমন। নিঃস্বার্থতায় পূর্ণ উচ্ছলতায় ভরপুর।