
প্রিন্ট: ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৩২ এএম
ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে যা লাগে

আল ফাতাহ মামুন
প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২০, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি সংগৃহীত
আরও পড়ুন
পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স কিংবা গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করার কথা ভাবলেই প্রথমে মাথায় আসে- কাকে দিয়ে করাব? আরও খোলাসা করে যদি বলি তাহলে এভাবে বলতে হয়- কোন দালাল ধরব? সরকারি ফি এত; দালালের ফি কত? দালাল ছাড়া লাইসেন্স হয় না- এ যেন অলিখিত সত্য বা নিয়মে পরিণত করে ফেলেছি আমরা।
সত্যি বলতে, সরকারি সেবায় দালাল বা মধ্যস্থতা যারা করেন, তাদের অসাধু মানসিকতা যেমন আছে, তেমনি আমরা যারা গ্রাহক আমাদের দোষও কম নয়। নানা ঘাটতি বা অসঙ্গতি নিয়েই আমরা লাইসেন্স করে ফেলতে চাই।
এক কথায়, নিয়মবহির্ভূত উপায়ে লাইসেন্স করার মানসকিতা আমাদের তাড়িয়ে বেড়ায়। এটিই দালালদের সবচেয়ে বড় পুঁজি। তারা এসে অফার করে, এত টাকার বিনিময়ে আমি লাইসেন্স করিয়ে দিতে পারব।
বিআরটিএ মিরপুর শাখার রেজিস্ট্রেশন ডিপার্টমেন্টের সহকারী পরিচালক প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, গ্রাহক সচেতন হলে হয়রানি কমে যাবে। বিআরটিএকে দালালমুক্ত করার জন্য আমরা বদ্ধপরিকর। আগে যে সিস্টেম ছিল সেখানেও যদি কেউ নিয়ম মেনে লাইসেন্স করতে চায়, তাহলেও দালালের দরকার ছিল না। আর এখন যে ডিজিটাল সিস্টেম আমরা করেছি, কেউ চাইলেও লাইসেন্স করানোর জন্য দালালি করা সম্ভব নয়।
রফিকুল ইসলাম বলেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ভিশন ২০২১ এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অংশ হিসেবে বিআরটিএকে আমরা নতুন আঙ্গিকে সাজিয়েছি। এখন কেউ চাইলেই ঘরে বসে ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে তাকে আমাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট bsp.brta.gov.bd-তে ঢুকে একটি মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করে লগইন করতে হবে। তারপর লার্নার লাইসেন্সের জন্য একটি ফরম আছে, সেটি পূরণ করে সাবমিট করতে হবে। নির্দিষ্ট ফি জমা দেয়ার পর ঘরে বসেই যে কোনো গ্রাহক লার্নার লাইসেন্স পেয়ে যাবেন। অনলাইনে ফরম পূরণ করা মোটেও কঠিন কোনো কাজ নয়। যে ফরমটা এতদিন গ্রাহক হাতে পূরণ করতেন, এখন সেটিই অনলাইনে পূরণ করবেন। বরং হাতে পূরণের চেয়ে অনলাইনে পূরণের ফলে এখন ভুল-ভ্রান্তি হওয়ার সুযোগ অনেক কমে গেছে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা
ড্রাইভিং লাইসেন্সের পূর্বশর্ত হল- লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকা। আবেদনকারীকে ন্যূনতম ৮ম শ্রেণি পাস হতে হবে। অপেশাদার লাইসেন্সের জন্য ১৮ বছর এবং পেশাদার লাইসেন্সের জন্য ২১ বছর হতে হবে। আবেদনকারীকে মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে।
ঘরে বসে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন
গ্রাহককে প্রথমে লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ অনলাইনে আবেদন করতে হবে। গ্রাহককে তার স্থায়ী ঠিকানা বা বর্তমান ঠিকানা প্রয়োজনীয় প্রমাণাদিসহ যেমন- বিদ্যুৎ অথবা গ্যাস বিলের ফটোকপি ইত্যাদি দেখিয়ে বিআরটিএর সার্কেল অফিসে আবেদন করতে হবে।
লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
১. নির্ধারিত ফরমে অনলাইনে আবেদন।
২. রেজিস্টার্ড চিকিৎসক কর্তৃক শারীরিক সুস্থতার মেডিকেল সার্টিফিকেট।
৩. ন্যাশনাল আইডি কার্ডের সত্যায়িত ফটোকপি।
৪. নির্ধারিত ফি (১ ক্যাটাগরি- ৩৪৫/- ও ২ ক্যাটাগরি- ৫১৮/- টাকা) বিআরটিএর নির্ধারিত ব্যাংকে (ব্যাংকের তালিকা www.brta.gov.bd-এ পাওয়া যাবে) জমার রশিদ।
৫। সদ্য তোলা ৩ কপি স্ট্যাম্প ও ১ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
আবেদন করার দুই থেকে আড়াই মাস পর লিখিত, মৌখিক ও ফিল্ড টেস্ট পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। অবশ্যই পরীক্ষার তারিখ আবেদনের সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহককে মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে। কোথায় পরীক্ষা দিতে চান- সে স্থান অনলাইনে ফরম পূরণের সময় গ্রাহক নিজে সিলেক্ট করে দেবেন।
লিখিত, মৌখিক এবং ফিল্ড টেস্ট পরীক্ষা উত্তীর্ণ হওয়ার পর আবার একটি নির্ধারিত ফরমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ফি প্রদান করে স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য সংশ্লিষ্ট সার্কেল অফিসে আবেদন করতে হবে। স্মার্টকার্ড প্রিন্টিং সম্পন্ন হলে গ্রাহককে এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়।
স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
১. নির্ধারিত ফরমে আবেদন।
২. রেজিস্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট।
৩. ন্যাশনাল আইডি কার্ডের সত্যায়িত ফটোকপি।
৪. নির্ধারিত ফি (পেশাদার- ১৬৭৯/- ও অপেশাদার- ২৫৪২/- টাকা) বিআরটিএর নির্ধারিত ব্যাংকে জমাদানের রশিদ।
৫. পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য পুলিশি তদন্ত প্রতিবেদন।
৬. সদ্য তোলা ১ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন
অপেশাদার
গ্রাহককে প্রথমে নির্ধারিত ফি (মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিনের মধ্যে হলে ২৪২৭/- ও মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিন পর প্রতি বছর ২৩০/- টাকা জরিমানাসহ) জমা দিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বিআরটিএর নির্দিষ্ট সার্কেল অফিসে আবেদন করতে হবে। আবেদনপত্র ও সংযুক্ত কাগজপত্র সঠিক পাওয়া গেলে একই দিনে গ্রাহকের বায়োমেট্রিক্স গ্রহণ করা হয়। স্মার্টকার্ড প্রিন্টিং সম্পন্ন হলে গ্রাহককে এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়।
পেশাদার
পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সধারীদের আবার একটি ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর নির্ধারিত ফি (মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিনের মধ্যে হলে ১৫৬৫/- ও মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিন পরে প্রতি বছর ২৩০/- টাকা জরিমানাসহ) জমা দিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বিআরটিএর নির্দিষ্ট সার্কেল অফিসে আবেদন করতে হবে। স্মার্টকার্ড প্রিন্টিংয়ের সব ধরনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে গ্রাহককে এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়।
ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়নের জন্য
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
১. নির্ধারিত ফরমে আবেদন।
২. রেজিস্টার্ড চিকিৎসক কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট।
৩. ন্যাশনাল আইডি কার্ডের সত্যায়িত ফটোকপি।
৪. শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ।
৫. নির্ধারিত ফি জমাদানের রশিদ।
৬. পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য পুলিশি তদন্ত প্রতিবেদন।
৭. সদ্য তোলা ১ কপি পাসপোর্ট ও ১ কপি স্ট্যাম্প সাইজ ছবি।