Logo
Logo
×

ঘরে বাইরে

ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বিহার

Icon

আবু আফজাল মোহা. সালেহ

প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০১৮, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

জয়পুরহাট থেকে পাহাড়পুর যেতে অটোরিকশায় চড়ে দেখা যাবে লাল স্থাপনা। রোমাঞ্চ জাগবেই। ছবিতে দেখা ওই যে পাহাড়পুর বা সোমপুর বিহার! পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার হচ্ছে ইউনেস্কো স্বীকৃত একটি ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। কয়েকবছরে এখানে নির্মাণ বা সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ হয়েছে। জয়পুরহাট কাছে হওয়ায় এখানে ভৌত অবকাঠামা তৈরি হয়নি। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার বা সোমপুর বিহার বা সোমপুর মহাবিহার বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার। পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপাল দেব (৭৮১-৮২১) অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করছিলেন। ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে স্যার আলেকজান্ডার কানিংহাম এই বিশাল স্থাপনা আবিষ্কার করেন।

পাহাড়পুর পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বৌদ্ধবিহার। আয়তনে এর সঙ্গে ভারতের নালন্দা মহাবিহারের তুলনা হতে পারে। এটি ৩০০ বছর ধরে বৌদ্ধদের অতি বিখ্যাত ধর্ম শিক্ষাদান কেন্দ্র ছিল। শুধু উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকেই শুধু নয়, চীন, তিব্বত, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশের বৌদ্ধরা এখানে ধর্মজ্ঞান অর্জন করতে আসতেন। খ্রিস্টীয় দশম শতকে বিহারের আচার্য ছিলে অতীশ দীপঙ্কর। ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে ইউনেস্কো এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের স্বীকৃতি প্রদান করে।

বিহারের মধ্যবর্তী উন্মুক্ত অঙ্গনে আরও কিছু ইমারতের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। এদের মাঝে বেশ কিছু ইমারতের বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। অঙ্গনের দক্ষিণ-পূর্বাংশে ভোজনশালা ও রন্ধনশালা অবস্থিত। এ দুটি স্থাপনার মাঝে ৪৬মি দীর্ঘ ইট বাঁধানো একটি নর্দমা আছে এবং এর কাছে এক সারিতে তিনটি কূপ আছে। এছাড়াও রয়েছে কিছু স্তূপ, ভবন, কেন্দ্রীয় মন্দিরের প্রতিকৃতি ইত্যাদি। স্তূপগুলোর মাঝে দক্ষিণ-পূর্বাংশে অবস্থিত স্তূপটি ১৬ কোণবিশিষ্ট নক্ষত্র আকৃতির। অনুচ্চ একটি মঞ্চের মাঝে সংস্থাপিত এ স্তূপটির সংলগ্ন স্থানে রয়েছে একটি পাকা কূপ। অন্যান্য স্তূপগুলো বিক্ষিপ্তভাবে নির্মিত।

বিহারের ভিক্ষু কক্ষ যার প্রতিটি বাহুর মধ্যস্থলে তৈরি কক্ষ বাদে বিহারের চার বাহুতে এরূপ ১৭৭টি বাস উপযোগী কক্ষ আছে। প্রতি কক্ষের ভেতরের আয়তন ৪ দশমিক ২৬ মিটার। শেষ সময়ে ৯২টি কক্ষে বেদি নির্মাণ করা হয়। প্রথমদিকে এগুলো ভিক্ষুদের বসবাসের জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। তারই ধ্বংসাবশেষ আছে এখানে।

পোড়ামাটির ফলক মন্দিরের দেয়ালগায়ে অলঙ্করণে পোড়ামাটির ফলকচিত্রের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। ২০০০-এরও বেশি ফলকচিত্র মন্দির গাত্রে শোভা পাচ্ছে। এছাড়া খননে প্রায় ৮০০ ফলকচিত্র বিক্ষিপ্ত অবস্থায় প্রত্নস্থল থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। অধিকাংশ ফলকচিত্র মন্দিরের সমসাময়িক। ফলকগুলো মন্দিরে স্থাপনের সময় কোনো রকম পরম্পরা রক্ষা করা হয়নি। দেয়ালের বিভিন্ন অংশে স্থাপিত ফলকগুলো বিভিন্ন পরিমাপের। কোনো কোনোটি আকারে বেশ বড়, আবার কোনো কোনোটি বর্গাকারের। তবে অধিকাংশ ফলকেরই সাধারণ উচ্চতা ৩৬ সেমি এবং প্রশস্ত ২০-২২ সেমি। ধর্মীয় তাৎপর্যপূর্ণ ফলকের সংখ্যা অত্যন্ত অল্প। তারমধ্যে বৌদ্ধ ও ব্রাক্ষ্মণ দেবদেবীকে সমানভাবে প্রদর্শন করা হয়েছে। এগুলো হল বিভিন্ন ধরনের শিব মূর্তি ছাড়া ব্রহ্মা, বিষ্ণু, গনেশ, সূর্য ইত্যাদি ব্রাহ্মণ্য দেবতার মূর্তি।

পাহাড়পুর বিহার সংলগ্ন একটি জাদুঘর আছে। যা প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর পরিচালনা করে। এ জাদুঘরে সংরক্ষিত উল্লেখযোগ্য নিদর্শনগুলো হচ্ছে- বেলে পাথরের মূর্তি, লাল পাথরের দণ্ডায়মান শীতলা মূর্তি, কৃষ্ণ পাথরের বিষ্ণুর খণ্ডাংশ, কৃষ্ণ পাথরের দণ্ডায়মান গনেশ, বেলে পাথরের কীর্তি মূর্তি, দুবলহাটির মহারাণীর তৈলচিত্র, হরগৌরীর ক্ষতিগ্রস্ত মূর্তি, কৃষ্ণ পাথরের লক্ষ্মী নারায়ণের ভগ্ন মূর্তি, কৃষ্ণ পাথরের উমা মূর্তি, বেলে পাথরের গৌরী মূর্তি, বেলে পাথরের বিষ্ণু মূর্তি, নন্দী মূর্তি, কৃষ্ণ পাথরের বিষ্ণু মূর্তি, সূর্য মূর্তি, কৃষ্ণ পাথরের শিবলিঙ্গ, বেলে পাথরের মনসা মূর্তি ইত্যাদি। প্রবেশ ফি দিয়ে জাদুঘরে রক্ষিত এসব দর্শনীয় জিনিস দেখা যাবে।

থাকা-খাওয়া

এখানে থাকা ও খাওয়ার ভালো ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। জয়পুরহাটে থাকতে হবে। সরকারি একটি গেস্ট হাউস আছে। কিন্তু আশপাশে তেমন আধুনিক কোন সুযোগ-সুবিধা নেই।

যাতায়াত

জেলা নওগাঁ হলেও পাহাড়েপুরে যেতে হলে জয়পুরহাট থেকেই যাওয়া সুবিধাজনক। বাস বা ট্রেনে জয়পুরহাটে নেমে অটোরিকশায় যাওয়া যাবে পাহাড়পুরে। জয়পুরহাট থেকে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের দূরত্ব মাত্র ১৩ কিলোমিটার। ট্রেনযোগে জয়পুরহাটের জামালগঞ্জ স্টেশনে নামলে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের দূরত্ব মাত্র পাঁচ কিলোমিটার। স্টেশন থেকে ভ্যান অথবা অটোরিকশা নিতে হবে। তবে জেনে রাখা ভালো জামালগঞ্জ স্টেশনে একটিবাদে কোনো আন্তঃনগর ট্রেন থামে না। বাসে দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে নওগাঁ শহরে এসে বালুডাংগা বাস টার্মিনাল হতে সরাসরি বাসযোগে ঐতিহাসিক পাহাড়পুরে যাওয়া যায়। আনুমানিক দূরত্ব ৩২ কিলোমিটার এবং বাস ভাড়া ৪০-৫০ টাকা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম