স্বর্ণচাঁপার স্থানীয় অন্যান্য নাম : চাঁপা, চাম্পা, চম্পা
বৈজ্ঞানিক নাম : Michelia champaca.
ফুল ফোটার মৌসুম : গ্রীষ্মকাল
পরিবার : Magnoliaceae.
জন্মস্থান : বাংলাদেশ, ভারত ও মালয়েশিয়া। বিস্তৃতি ঢাকায় রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, নীলক্ষেত, বোটানিক্যাল গার্ডেনসহ পাহাড়ি এলাকা।
নজরকাড়া রং আর মনভরানো সুবাসের জন্য স্বর্ণচাঁপা বিখ্যাত। এ কারণে আমাদের প্রিয় ফুলগুলোর মধ্যেও অন্যতম। তাছাড়া স্বর্ণচাঁপা এ অঞ্চলের অনেক পুরনো ফুল। গ্রীষ্মে ফুল ফোটার মৌসুমে ক্ষুদে ফেরিঅলাদের কাছে এ ফুল দেখা যায়। ওরা গাছ থেকে পেড়ে নিয়ে অনেকগুলো ফুল দিয়ে আঁটি বাঁধে। জনপ্রিয়তার কারণে আমাদের প্রাচীন লোকগীতি, কবিতা ও উপমায় অনেকভাবে এ ফুলের প্রসঙ্গ এসেছে। জানামতে ঢাকার শাহবাগে গণগ্রন্থাগারের প্রবেশপথের বাঁ পাশে কয়েকটি উঁচু গাছ চোখে পড়ে। জাতীয় জাদুঘরের ভাস্কর নভেরা হল লাগোয়া পুকুরপাড়ে আছে বেশ কয়েকটি। এছাড়া ঢাকা শহরের নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ি, হলিক্রস স্কুল, সড়ক ভবন, জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা পার্ক, শিশু একাডেমি, সিলেট ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন পথের পাশে দেখা যায়।
স্বর্ণচাঁপা মূলত পাহাড়ের গাছ। সমতলেও স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে। গাছের কাণ্ড সরল, উন্নত, মসৃণ ও ধূসর। ১০ থেকে ১৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। পাতা চ্যাপ্টা, উজ্জ্বল-সবুজ, একান্তরে ঘনবদ্ধ। ফুল একক, কাক্ষিক এবং ম্লান-হলুদ, রক্তিম কিংবা প্রায় সাদা। পাপড়ি সংখ্যা প্রায় ১৫। আমাদের দেশে সাদা রঙের ফুলও আছে। পরিপূর্ণভাবে প্রস্ফুটিত চাঁপাফুল তীব্র সুগন্ধি। গ্রীষ্মের প্রথমভাগ থেকে বর্ষা-শরৎ অবধি ফুল থাকে। ফুল শেষ হলেও গুচ্ছবদ্ধ ফল ধরে। দেখতে অনেকটা আঙুরের মতো। কাক ও শালিকের প্রিয় খাদ্য। চাঁপাফুল ভেষজগুণেও অনন্য। বাকল ও ফুল বাতরোগের ওষুধ। ফুলের আরক চক্ষুরোগে ব্যবহার্য। বীজ পায়ের ক্ষতে উপকারী। কাঠ মজবুত। হিন্দু ও বৌদ্ধদের কাছে এ গাছ অত্যন্ত পবিত্র। শ্রীলঙ্কায় বুদ্ধমূর্তি তৈরিতে এর কাঠ ব্যবহৃত হয়।
লেখক : প্রকৃতিবিষয়ক লেখক, সম্পাদক- তরুপল্লব