নেশা হারাম আয়াত নাজিল হওয়ার পর

মাওলানা মোহাম্মদ ইয়াছিন মজুমদার
প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০১৮, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
মাদকদ্রব্য মানুষের দৈহিক, মানসিক বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করে। সেই সঙ্গে মাদক গ্রহীতা নেশার টাকা সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সমস্যা সৃষ্টি করে। ইসলাম কল্যাণ ও উপকারের ধর্ম। এ জন্য ইসলাম মাদক ও নেশাদ্রব্য গ্রহণকে হারাম করেছে। আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেছেন- হে ঈমানদারগণ নিশ্চয় মদ, জুয়া, পূজার বেদি, লটারি ইত্যাদি ঘৃণিত ও শয়তানের কাজ, তোমরা এ থেকে বিরত থাকলে সফল হবে (সূরা মায়িদা, আয়াত ৯০)। আল্লাহপাক আরও বলেন, তারা আপনাকে মদ, জুয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করে আপনি বলুন উভয়টিতে রয়েছে মহাপাপ (সূরা বাকারা, আয়াত ২১৯)। মাদক বিষয়ে নবী (সা.)-এর অসংখ্য বাণী রয়েছে। তিনি বলেছেন, মাদক গ্রহণকারী জান্নাতে যাবে না (ইবনে মাজাহ)। আমার উম্মতের একদল লোক মদ পান করবে তারা মদকে অন্য পানীয়ের নামে নাম পরিবর্তন করে পান করবে। নেতাদের গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্রের মাধ্যমে সম্মান দেখানো হবে। যখন এ দিন আসবে তখন ভূমিধস, বানর, শূকরের মতো আকৃতি বিকৃতি হবে (বুখারি-ইবনে মাজাহ)। আল্লাহপাক অঙ্গীকার করেছেন, যে মদ পান করবে তাকে ত্বীনাতুল খাবাল অর্থাৎ জাহান্নামিদের দেহ থেকে বেরোনো ঘাম, রক্ত ও পুঁজ যা জাহান্নামে জমা হবে তা পান করানো হবে (মুসলিম)। নিশ্চয় ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা নবুয়ত ও রহমত দিয়ে শুরু হয়েছে, এরপর এটা রহমত হিসেবে হবে, অতঃপর অত্যাচারী শাসকের যুগ হবে, এরপর কঠোরতা, উচ্ছৃঙ্খলতার যুগ হবে, নারী দেহ, মদককে বৈধ মনে করা হবে। তারপরও তারা রিজিকের প্রাচুর্য ও সাহায্যপ্রাপ্ত হবে, আল্লাহর সাথে (হিসাবের মাঠে) সাক্ষাৎ হওয়া পর্যন্ত (বায়হাকী)।
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) মদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দশ ধরনের লোককে অভিশাপ দিয়েছেন। তারা হল- মদ প্রস্তুতকারী, পরামর্শদাতা, পানকারী, বহনকারী, যার জন্য বহন করা হয়, পরিবেশনকারী, বিক্রেতা, মূল্যভোগী, ক্রেতা, যার জন্য ক্রয় করা হয় (তিরমিযী)। মদ পানকারী জান্নাতে যাবে না (ইবনে মাজাহ)। প্রত্যেক নেশা মাদক, প্রত্যেক মাদক হারাম (ইবনু মাজাহ)। তিনি আরও বলেছেন- বেশি পরিমাণ গ্রহণে যাতে নেশা হয় তার অল্প পরিমাণ ও হারাম (ইবনি মাজাহ)। আল্লাহপাক বলেছেন- তোমরা নিজেদের ধ্বংসের পথে নেবে না (সূরা : আরাফ, আয়াত ১৫৯)। ধূমপান, তামাক, গুল ইত্যাদি মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর, জীবন বিধ্বংসী এবং আসক্তি সৃষ্টি করে, অর্থের অপচয় হয়, তাই বর্তমানে অধিকাংশ ওলামাদের মতে এগুলোও হারাম। মদ হারাম হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নবী (সা.) যেসব পাত্রে মদ প্রস্তুত ও পরিবেশন করা হতো সেগুলো অন্য কাজের জন্য ব্যবহারও নিষেধ করেছেন। জাহেলিয়াতের অন্ধকার দূর করতে যখন ইসলামের আবির্ভাব হয়, তখন আরব জাতি ছিল মদে আসক্ত, অতিথি আপ্যায়নসহ কোনো অনুষ্ঠান মদ পরিবেশন ছাড়া চিন্তাও করা হতো না। ঘরে ঘরে বিভিন্ন ধরনের মদ তৈরি হতো। তার ধারাবাহিকতায় সাহাবায়ে কেরামও (রা.) মদ পান করতেন। এক অনুষ্ঠানে কিছু সাহাবা মদ পান করছিলেন এক একজন এক এক অবস্থায় ছিলেন। কেউ খাচ্ছিলেন, কেউ ঢালছিলেন, কেউ ঠোঁটের সঙ্গে গ্লাসটি লাগাচ্ছেন এমন সময় ঘোষণাকারী ঘোষণা করল মদকে হারাম করে আয়াত নাজিল হয়েছে। অমনি যে যার অবস্থায় থেমে গেলেন। যিনি মুখে নিয়েছেন তিনি কুলির মতো করে ফেলে দিলেন এক ঢোকও পান করলেন না। যিনি গ্লাস ঠোঁটে ছুঁইয়েছেন তিনি তা নামিয়ে ফেললেন। যার যার ঘরে যত মদ ছিল শুধু ওই একটি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে স্বেচ্ছায় সব মদ ছুড়ে ফেলে দেয়া হল। মদিনার অলি-গলি এমনভাবে ভিজে গেল যেন মদ বৃষ্টি হল।
সে সময়ের মুসলমান পরিপূর্ণ ঈমানদার ছিলেন। আল্লাহ ও তার রাসূলের বিধান ছিল তাদের কাছে সব কিছুর ওপরে। তারা নৈতিকতার উচ্চস্তরে ছিলেন তাই এক ঘোষণায় মদ বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। আমাদের দেশে মাদকের বিরুদ্ধে যে ব্যবসা চলছে এর সঙ্গে নৈতিক শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। ধর্মীয় শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে, ইসলাম মাদকদ্রব্য হারাম করেছে তাই মাদককে সব স্তরে নিষিদ্ধ করতে হবে।
লেখক : অধ্যক্ষ ফুলগাঁও ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা, কুমিল্লা