Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

২০২৩ সালের সেরা মুসলিম ব্যক্তিত্ব মাওলানা সাইয়্যিদ মাহমুদ মাদানী

Icon

তানজিল আমির

প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২২, ০২:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

২০২৩ সালের সেরা মুসলিম ব্যক্তিত্ব মাওলানা সাইয়্যিদ মাহমুদ মাদানী

মাওলানা সাইয়্যিদ মাহমুদ মাদানী

২০২৩ সালের শীর্ষ প্রভাবশালী পাঁচশ মুসলিম ব্যক্তিত্বের তালিকা প্রকাশ করেছে জর্ডানের আম্মানভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘দ্য রয়েল ইসলামিক স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ সেন্টার’।

এতে বর্ষসেরা ব্যক্তিত্ব হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সভাপতি ও দারুল উলুম দেওবন্দের মজলিসে শুরার সদস্য মাওলানা মাহমুদ আসআদ মাদানি। তালিকায় বিশ্বের ১৫তম ও ভারতের প্রথম প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তি হিসাবে তার নাম উঠে এসেছে।

রোববার (৩০ অক্টোবর) প্রকাশিত এ তালিকায় বর্ষসেরা মুসলিম নারী হিসাবে খ্যাতিমান অনুবাদক আয়েশা আবদুর রহমান বিউলির নাম ঘোষণা করা হয়।

এ তালিকায় প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্বদের শীর্ষে রয়েছেন যথাক্রমে সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ, ইরানের ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হাম্মাদ, রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান, জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ এবং পাকিস্তানের মুফতি তকি উসমানি।

এমন সম্মাননায় নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন মাওলানা মাহমুদ মাদানি। তিনি ভবিষ্যতে ভারতীয় মুসলিম ও মানব সমাজের সেবায় নিজের সর্বোচ্চটুকু ব্যয় করবেন বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

দ্য মুসলিম ফাইভ হান্ড্রেড ওয়েবসাইটে বলা হয়, মাওলানা মাহমুদ মাদানি দীর্ঘ দুই দশকের বেশি সময় জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের (জেইউএইচ) সংগঠনের জেনারেল সেক্রেটারি ছিলেন। এ সংগঠনের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদের নিন্দা জানিয়ে ইসলামফোবিয়ার মতো বিতর্কিত বিষয়গুলোর বিরুদ্ধে জোরালো ভূমিকা পালন করে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করেন তিনি।

জমিয়তে দায়িত্ব পালনকালের দীর্ঘ দুই দশকে গুজরাট, বিহার, দিল্লি, তামিলনাড়ু, কাশ্মীর, কেরালা, আসাম, ইউপি, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা ইত্যাদি স্থানে ট্র্যাজেডির শিকার ব্যক্তিদের নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। তা ছাড়া সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার আন্দোলনের সমর্থনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতা এবং বহুত্ববাদনীতির জন্য তার উপস্থিতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তার তত্ত্বাবধানে আধুনিক সময়ের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে তার সংগঠন কর্তৃক পরিচালিত হাজার হাজার মক্তব ও মাদ্রাসায় পড়ুয়া লাখ লাখ শিশু শিক্ষার্থীর জন্য বিশেষায়িত শিক্ষা কারিকুলামের ব্যবস্থা করা হয়। তা ছাড়া দারুল উলুমের শিক্ষা কারিকুলামকে কিছুটা উন্নত করে একটি প্রকল্প শুরু করেন, যার মাধ্যমে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক স্তরে (১০ম শ্রেণি) উত্তীর্ণ হিসাবে স্বীকৃত দেওয়া হয়। তরুণদের মধ্যে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় দক্ষতা উন্নয়নে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের অধিভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসাবে জমিয়ত ইয়ুথ ক্লাব চালু করেন। বিশ্বখ্যাত ভারত স্কাউটস অ্যান্ড গাইডসের তত্ত্বাবধানে সমাজে তরুণদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের জন্য বিভিন্ন শিক্ষা প্রদান করা হয়।

মাহমুদ মাদানির পরিচয় জানিয়ে রয়্যাল ইসলামিক স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ সেন্টার (আরআইএসএসসি) তাদের ওয়েবসাইটে বলেছে, মাওলানা মাহমুদ মাদানি একজন ভারতীয় ইসলামি স্কলার, রাজনীতিবিদ ও সমাজকর্মী। ১৯৬৪ সালে উত্তরপ্রদেশের দেওবন্দে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৯২ সালে তিনি দারুল উলুম দেওবন্দে পড়াশোনা সম্পন্ন করেন। ভারতের প্রাচীনতম সর্ববৃহৎ সংগঠন জমিয়ত উলামায়ে হিন্দের (জেইউএইচ) একাংশের সভাপতি। সব সময়ই বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য ও আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার আপ্রাণ চেষ্টা তার অনন্য বৈশিষ্ট্য। ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের রাজ্যসভায় রাষ্ট্রীয় লোকদল (আরএলডি) দলের সদস্য হিসাবে ২০০৬ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

ভারতে মুসলিম জনসাধারণের জন্য শিক্ষা ও আইনি অধিকার নিশ্চিত করা ও সমাজসেবায় তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

২০০১ সালে মাওলানা মাহমুদ মাদানী হিন্দ জমিয়তের জেনারেল সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। এর পর থেকে কাউন্সিলে তিনি বারবার জেনারেল সেক্রেটারি নির্বাচিত হয়ে আসছেন। জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ ভারতীয় মুসলমানদের সর্ববৃহৎ পুরোনো প্ল্যাটফরম।

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে এ সংগঠনটির জন্ম। উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে এ দলটির ব্যাপক অবদান রয়েছে। মাওলানা মাহমুদ মাদানী ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের প্রাণপুরুষ সাইয়্যেদ হুসাইন আহমদ মাদানীর পৌত্র ও সাইয়্যেদ আসআদ মাদানীর ছেলে।

তার বুদ্ধিবৃত্তিক প্রচেষ্টা ও সৃজনশীল কর্মপন্থায় ভারতীয় মুসলমানরা এক অভিন্ন প্ল্যাটফরমে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। মাহমুদ মাদানীর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ভারতের সর্বমহলে স্বীকৃত। তার আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি, মত পথ ভুলে এক কাতারে সবাইকে নিয়ে চলার মানসিকতা ও উদ্যোগ তাকে পৌঁছে দিয়েছে এক অনন্য উচ্চতায়। তার বাবার উপাধি ছিল-‘ফিদায়ে মিল্লাত’ অর্থাৎ উম্মাহর জন্য উৎসর্গিত। বাবা ফিদায়ে মিল্লাত সাইয়্যেদ আসআদ মাদানীর (রহ.) পদাঙ্ক অনুসরণ করে মাওলানা মাহমুদ মাদানী মিল্লাতের কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত হয়ে কাজ করছেন।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের নিরীহ জনগোষ্ঠীর ওপর পাক বাহিনীর জুলুম-নির্যাতনের প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল ও ভারতীয় পার্লামেন্টের লোকসভার সদস্য হজরত আসআদ মাদানী (রহ.)।

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ভারতের মুসলমান সমাজে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রবল জনমত গঠনের কাজ করেন মাওলানা আসআদ মাদানী।

রাজধানী দিল্লিতে বিশাল মহাসমাবেশসহ ভারতজুড়ে প্রায় ৩০০টি সমাবেশ করেন তিনি। শরণার্থী শিবিরগুলোতে তার অপরিসীম সহযোগিতা ও দেখাশোনা, গণনির্যাতন বন্ধ করার জন্য তার বিরামহীন দুঃসাহসী ভূমিকা এবং বাংলাদেশের জনগণের স্বাধিকার প্রাপ্তিতে তার অবদান স্বাভাবিকভাবে তাকে স্বাধীনতার অন্যতম কাণ্ডারি দূতের মহিমা দিয়েছে।

১ অক্টোবর ২০১৩ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তাকে ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশাল অবদান রাখায় বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা (মরণোত্তর) পদক প্রদান করে বিরল সম্মানে ভূষিত করে। তার পক্ষে এ সম্মান গ্রহণ করেন তার মেজো ছেলে মাওলানা মওদুদ মাদানী। এ সম্মান শুধু তার নয়, সব দেওবন্দি ওলামা-মাশায়েখের এবং এ দেশের সব মাদ্রাসার।

ভারতীয় মুসলমানদের যে কোনো সংকটে মাহমুদ মাদানী যেন এক ভরসা ও সাহসের নাম। সংখ্যালঘু বলে মুসলিম সম্প্র্রদায়কে যেখানে নিয়মিত কোণঠাসা করার চেষ্টা চলছে, এর বিপরীতে ‘ভারতে মুসলমানরা সংখ্যালঘু নয়-দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ’ তার এমন একটি কথাই মুসলমানদের মনোবল দৃঢ় করে।

ভারতের শীর্ষ আলেমদের অনেকেই মাহমুদ মাদানীর মাঝে শাইখুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদ হাসানের ছায়া খুঁজে ফেরেন। তাই তো তাকে ‘শাইখুল হিন্দে সানী’ বা দ্বিতীয় শাইখুল হিন্দ বলা হয়।

লেখক: তরুণ আলেম ও গবেষক

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম