Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

কীর্তিতে অমর

বড় পির আবদুল কাদের জিলানী

Icon

ফিরোজ আহমাদ

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২২, ০২:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

হজরত আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) ১ রমজান ৪৭১ হিজরিতে ইরানের অন্তর্গত জিলান জেলার কাসপিয়ান সমুদ্র উপকূলের নাইদ নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম হজরত আবু সালেহ মূছা জঙ্গী (রহ.) ও মাতার নাম সৈয়দা উম্মুল খায়ের ফাতিমা (রহ.)। ১১ রবিউস সানি ৫৬১ হিজরি রোজ সোমবার ইহকাল ত্যাগ করেন। ইরাকের বাগদাদ শহরে মাজার শরিফ রয়েছে। তিনি বড় পির হিসাবে পরিচিত।

জিলানী (রহ.)-এর বাল্যশিক্ষা মক্তবে শুরু হয়। প্রথম দিন মক্তবে গিয়ে দেখেন, অন্যান্য ছাত্রদের ভিড়ে বসার কোনো জায়গা নেই। হঠাৎ করে ওপর থেকে গায়েবি আওয়াজ এলো, হে মক্তবের ছাত্ররা! আল্লাহর অলিকে তোমরা বসার স্থান করে দাও। অতঃপর মক্তবের ছাত্ররা চেপে বসল। হজরত আবদুল কাদের জিলানী (রহ.)-এর বসার স্থান হয়ে গেল। মক্তবে প্রথম সবক নিতে গিয়ে অবাক করা কাণ্ড ঘটল! হজরত আবদুল কাদের জিলানী (রহ.)কে মক্তবের শিক্ষক যখন আউজু বিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ সবক দান করলেন। শিক্ষক কিছু বুঝে ওঠার আগেই বালক হজরত আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) কুরআন মাজিদের আঠারো পারা পর্যন্ত মুখস্থ বলে ফেললেন। এ দৃশ্য অবলোকন করে মক্তবের শিক্ষক আশ্চার্য হয়ে গেলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, হে বালক! তুমি কীভাবে কুরআন মুখস্থ করেছ! আজ মক্তবে তোমার প্রথম দিন। হজরত আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) বলেন, আমি যখন মায়ের গর্ভে ছিলাম। আমার মা প্রতিদিন কুরআন পাঠ করতেন। মায়ের তেলাওয়াত শুনে শুনে আঠারো পারা পর্যন্ত আমার মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল।

তৎকালীন সময়ে ইরাক ছাড়া ভালো পড়াশোনা ও ব্যবসার সুযোগ ছিল না। বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ পড়াশোনা ও ব্যবসার জন্য ইরাকের বাগদাদ শহরে আসত। হজরত আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) পড়াশোনার উদ্দেশ্যে ব্যবসায়িক কাফেলার সঙ্গে বাগদাদ যাওয়ার পথে ডাকাত দলের কবলে পড়েন। হজরত আবদুল কাদের জিলানী (রহ.)কে ডাকাত দলের সর্দার জিজ্ঞেস করলেন, তোমার সঙ্গে কী আছে? তিনি বললেন, আমার নিকট ৪০টি স্বর্ণ মুদ্রা আছে। ডাকাত দলের সর্দার আশ্চার্যন্বিত হয়ে আবার জিজ্ঞেস করলেন, হে যুবক! তুমি তো মিথ্যা কথা বলে আমার কাছ থেকে স্বর্ণমুদ্রা লুকাতে পারতে। হজরত আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) বললেন, আমার মা মিথ্যা কথা বলতে নিষেধ করেছেন। এ কথা শুনে ডাকাত দলের সর্দার বললেন, মায়ের আদেশ তুমি এভাবে পালন কর। নিশ্চয়ই তুমি আল্লাহর আদেশ আরও যত্নের সঙ্গে পালন কর। এ কথা বলে ডাকাত সর্দার আপসোস করতে থাকেন। হে বালক! তুমি সাধারণ কোনো মানুষ নও। হে বালক হজরত আবদুল কাদের জিলানী (রহ.)! তুমি আমাকে কলেমা পড়াও। ডাকাত দলের সর্দারের সঙ্গে আরও ৬০ জন অশ্বারোহী ডাকাত ছিলেন। তারাও সঙ্গে সঙ্গে কলেমা পড়ে মুসলমান হয়ে গেল।

হজরত আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) একাধারে ৪০ বছর পর্যন্ত এশার নামাজের ওজু দিয়ে ফজরের নামাজ আদায় করেছেন। যৌবনের অধিকাংশ সময় নামাজের পাশাপাশি রোজা রেখে কাটিয়েছেন। নফল নামাজে সূরা ফাতেহার সঙ্গে সূরা আর রহমান, সূরা মুজাম্মিল কিংবা সূরা ইখলাস মিলিয়ে পড়তেন। যখনই চোখে ঘুম আসত, তখন দেখে দেখে কুরআন তেলাওয়াত করতেন।

হজরত আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) ইসলামের প্রচার ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। মানুষকে আল্লাহ ও রাসূল (সা.)-এর নির্দেশিত পথে দাওয়াত দিয়েছেন। হজরত আবদুল কাদের জিলানী (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর, ভক্ত ও অনুসারীরা তার আমল ও চরিত্রকে সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে কাদেরীয়া তরিকার সূচনা করেন। সে সময় থেকে কাদেরীয়া তরিকার প্রচলন শুরু হয়েছে।

আবদুল কাদের জিলানী (রহ.)-এর উপাধিগুলো বিশ্বব্যাপী পরিচিত ও স্বীকৃত। আদর্শিক জীবন ও কর্মের স্বীকৃতি হিসাবে বিভিন্ন উপাধীতে ভূষিত হয়েছেন। যেমন-গাউসুল আজম, বড় পির, মাহবুবে সোবহানী, গাউসে সামদানি, মহিউস সুন্নাহ, কুতুবে রাব্বানি, ইমামুল আউলিয়া, সৈয়দ, পির, মির, মহিউদ্দিন, কামিউল বিদায়াত, নূরে হক্কানি, পিরানে পির, জিলানী, দস্তগির ইত্যাদি।

লেখক : ইসলামিক চিন্তাবিদ ও গবেষক

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম