Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

শান্তির বাণী ছড়িয়ে দিন ওয়াজ মাহফিল থেকে

Icon

মুহাম্মদ আবদুল আলিম

প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

শান্তির বাণী ছড়িয়ে দিন ওয়াজ মাহফিল থেকে

ওয়াজ মাহফিল হচ্ছে একটি অতিপ্রাচীন প্রচলিত ধারা; যা ইসলামের প্রকৃত বাণীর প্রচার-প্রসার এবং মানুষের মধ্যে মূল্যবোধ ও নীতি-নৈতিকতার ভিত গড়ে তোলার অন্যতম মাধ্যম হিসাবে কাজ করত। এটিই আল্লাহ্র পথ থেকে বিচ্যুত মানুষকে আল্লাহ্র পথপ্রদর্শন ও রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর আদর্শে অনুপ্রাণিত করার সবচেয়ে কার্যকরী মাধ্যম হিসাবে পরিগণিত হতো।

অথচ বর্তমান সমাজে সে পূর্বেকার ওয়াজ মাহফিলের নীতি ও আদর্শগুলো হারিয়েছে। জ্ঞানগর্ভ, বিষয়ভিত্তিক, গঠনমূলক, যুক্তিনির্ভর এবং উত্তম পন্থায় আচরণের পরিবর্তে জায়গা করে নিয়েছে অজ্ঞতাপূর্ণ, অশ্লীল, উগ্রবাদী এবং বিদ্বেষমূলক আচরণ।

‘ওয়াজ’ শব্দের শাব্দিক অর্থ উপদেশ। পবিত্র কুরআনেও এ শব্দের ব্যবহার উপদেশ দেওয়ার অর্থেই ব্যবহার হয়েছে। মানবজাতির কাছে ইসলামের বার্তাকে সুন্দরভাবে এবং প্রজ্ঞার সঙ্গে উপদেশ দেওয়ার মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন, তুমি তোমার প্রতিপালকের পথে আহ্বান করো প্রজ্ঞা ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সঙ্গে তর্ক করবে উত্তম পন্থায়।’ (সূরা নাহল-আয়াত : ১২৫)।

আরও বলেন, ‘(আল্লাহ্) তোমাদের উপদেশ দেন, যাতে তোমরা শিক্ষাগ্রহণ করো।’ (সূরা নাহল-আয়াত : ৯০) ‘তুমি উপদেশ দিতে থাক, কারণ উপদেশ মুমিনদেরই উপকারে আসে।’ (আয যারিয়াত-আয়াত : ৫৫) রাসূলুল্লাহ্ (সা.)ও সদুপদেশের মাধ্যমে মানুষকে দ্বীনের পথে আহ্বান করতেন। আর তাঁর উপদেশ বার্তার মধ্যে কখনো অজ্ঞতা, অশ্লীলতা, উগ্রবাদিতা এবং বিদ্বেষমূলক আচরণের বৈশিষ্ট্য বিন্দুমাত্র ছিল না।

তাই একজন মুসলমান হিসাবে তার ওপর আবশ্যক যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর নীতি এবং আদর্শবহির্ভূত কাজ সর্বদা পরিত্যাগ করা। ঠিক এ কারণেই আজকের সমাজের বহুল প্রচলিত ওয়াজ মাহফিলগুলোর অনৈতিক এবং অনাদর্শিক কার্যকলাপগুলো বয়কট করা আমাদের দায়িত্ব।

সাম্প্রতিক সময়ের ওয়াজ মাহফিলগুলোতে কিছু নামধারী বক্তা বা আলেমরা এমন অজ্ঞতাপূর্ণ এবং উদ্ভট কথাবার্তা বলে বেড়ায়, যার সঙ্গে ইসলামের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই। এ ছাড়া মাহফিলগুলোতে চর্চিত হচ্ছে- উদ্ভট কেচ্ছা কাহিনি, অশ্লীল গালিগালাজ, পারস্পরিক বিদ্বেষ ও কাদা ছোড়াছুড়ি, নারী বিদ্বেষ, অশ্লীল শারীরিক অঙ্গভঙ্গি, নাচানাচি, উগ্রবাদী এবং জঙ্গিবাদী আচরণ।

এমনকি স্বগোত্রীয় বা ভিন্ন গোত্রীয় আলেমদের কাফির, মুশরিক, মুনাফিক, মুরতাদ ইত্যাদি বলে বলে মুসলমানদের মধ্যে পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ ছড়ানো; যা প্রতিনিয়ত ইসলাম ধর্মকে আধুনিক বিশ্বের কাছে প্রশ্নের সম্মুখীন করছে।

অথচ আল্লাহ এবং রাসূল প্রদত্ত শিক্ষা ছিল, মানুষকে আহ্বান করবে জ্ঞানগর্ভ ও যুক্তিনির্ভর এবং উত্তম পন্থায় কুরআন ও হাদিসের আলোচনার মাধ্যমে, ভালোবাসা এবং সদুপদেশের মাধ্যমে। এমনকি আল্লাহর নির্দেশ হচ্ছে, ‘তোমরা মন্দের সঙ্গে উত্তমভাবে মোকাবিলা করবে এবং শত্রুর সঙ্গে এমনভাবে আচরণ করবে যেন, সে তোমার প্রাণের বন্ধু।’ (সূরা হামিম সিজদাহ-আয়াত : ৩৪)।

তাই রাসূলের সম্পূর্ণ জীবনে দ্বীনের দাওয়াত দেওয়ার সময় কখনো তিনি অজ্ঞতা, উগ্রতা, অশ্লীলতা, পারস্পরিক রেষারেষি, হিংসা-বিদ্বেষ এসব দেখাননি। বরং রাসূলের আচরণ এতটাই সুন্দর ছিল যে, জাহেলি যুগে সবাই নিজ থেকেই তাঁর ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতেন। এমনকি তাঁর অসংখ্য বাণীতে এমন অনৈতিক আচরণ সম্পর্কে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এবং সতর্কতার উল্লেখ পাওয়া যায়।

তাই তো সব ইতিহাসবেত্তা নির্দ্বিধায় তাকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ অনুসরণীয় এবং আদর্শিক মানুষ অর্থাৎ সর্বশ্রেষ্ঠ মনীষী হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। আর সব মুসলমানের ওপর আবশ্যক যে, মহান আল্লাহ ও রাসূল প্রদত্ত শিক্ষাকেই ধারণ করেই জীবন অতিবাহিত করা।

তাই সাধারণ মুসলিম জনগণ এবং ওয়াজ মাহফিলের আয়োজকদের ওপর আবশ্যক যে, এমন ব্যক্তিকে ওয়াজ মাহফিলে দাওয়াত দেওয়া যিনি জ্ঞানী, খোদা ভিরু, মুত্তাকি, মিষ্টভাষী, সুন্নাহের অনুসারী এবং নিজ কথার ওপর আমলকারী ইত্যাদি গুণে গুণান্বিত। এবং একই সঙ্গে আলেম সমাজের ওপরও আবশ্যক যে, তাদের অজ্ঞাতপূর্ণ ও উগ্রবাদী এবং বিদ্বেষমূলক আচরণ পরিহার করে রাসূলের সুন্নাহ মোতাবেক আচরণ করা। তখনই সমাজের কাছে ইসলাম শান্তির ধর্ম হিসাবে গৃহীত হবে।

অতএব, বর্তমান সমাজে প্রচলিত ওয়াজ মাহফিলের অশুদ্ধ এবং অনৈতিক ধারা পরিহার করা একান্ত সবাই দায়িত্ব। ওয়াজ মাহফিল হোক; তবে তা হোক জ্ঞানগর্ভ, যুক্তিনির্ভর এবং উত্তম পন্থায়। তাই এ ব্যাপারে সাধারণ জনগণ এবং আলেম সমাজ আরও বেশি সচেতন হবে বলে আশা রাখছি।

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম