দ্বীনের বাতিঘর
মারকাযু ফয়জিল কুরআন

সুহাইল আহমদ
প্রকাশ: ২১ মে ২০২১, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
মিরপুর দারুস সালাম থানা থেকে একটু সামনে এগোলে চকলেট কালারের চারতলা ভবন। ভবনের দ্বিতীয়তলার বেলকনিজুড়ে সবুজ ব্যানারে বড় হরফে লেখা ‘মারকাযু ফয়জিল কুরআন আল ইসলামী ঢাকা’। ভেতরে প্রবেশ করলে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের কণ্ঠে আল কুরআনের জাদুকরী সুর যে কারও হৃদয় কাড়ে। আধুনিক ও ইসলামি শিক্ষার অপূর্ব সমন্বয়ে পরিচালিত এ ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির লেখাপড়ার মান ও পরিবেশ অন্য যে কোনো মাদ্রাসা থেকে ব্যতিক্রমী ও সন্তুষ্টজনক হওয়ায় অতি অল্প সময়ে ইসলামি শিক্ষায় আগ্রহী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে এটি। মাদ্রাসার পরিচালক গুলশান সোসাইটি জামে মসজিদের খতিব মুফতি মুরতাজা হাসান ফয়েজী মাসুম বলেন, সম্প্রতি বছরগুলোয় বাংলাদেশ থেকে প্রচুর হাফেজ বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন। শতশত দেশকে পেছনে ফেলে তারা বাংলাদেশের মুকুটে যুক্ত করছেন বিশ্বজয়ের পালক। এটি আমাদের জন্য গৌরব ও গর্বের। দুঃখের বিষয় হলো, বাংলাদেশের যেসব মেধাবী হাফেজ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন, তাদের অধিকাংশই ইলমে দ্বীন চর্চার ময়দান থেকে একেবারে হারিয়ে যান। বিশ্বমানের হাফেজরা যেন বিশ্বমানের আলেম এবং দ্বীনের সেবক হয়ে দেশ-বিদেশে ইসলাম ও মানবতার কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন- সেই মহান লক্ষ্যেই ২০১৪ সালে মারকাযের শুভযাত্রা। তিনি অত্যন্ত আফসোসের সঙ্গে বলেন, আজও বাংলাদেশের অধিকাংশ মাদ্রাসার অভ্যন্তরীণ পরিবেশ- ক্লাসরুম, ছাত্রাবাস, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি মানসম্মত পর্যায়ে পৌঁছেনি। লক্ষ করলে দেখবেন, মাদ্রাসার সবচেয়ে পুরোনো বা সবচেয়ে নিুমানের ভবনে হেফজখানার অবস্থান। ছালার চট আর ছেঁড়া চাটাইয়ের ওপরই কোমলমতি কুরআনের শিক্ষার্থীরা দিনে পড়ে আর রাতে ঘুমায়। এটি এক ধরনের কুরআনের অপমানও বটে। মুফতি মুরতাজা বলেন, যুগসচেতন দেশপ্রেমিক হাফেজ ও আলেম তৈরি করতে হলে ইসলাম ও সমকালীন জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমন্বিত মানসম্মত শিক্ষা সিলেবাসের প্রতি গুরুত্ব তো দিতেই হবে, পাশাপাশি শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ যেন নিশ্চিত হয় সে বিষয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে সজাগ থাকতে হবে। জানা যায়, মারকাযের শিক্ষার্থীরা এ পর্যন্ত দুবাই, কুয়েত, কাতার, মিসর, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশে হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড (বেফাক)-এর কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় প্রতি বছরের মতো এবারও হিফজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন। এ বছর কিতাব বিভাগের ১২ জন শিক্ষার্থী বেফাকের মেধা তালিকায় রয়েছেন। এ ছাড়া পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষ্যে বাংলাভিশন, আরটিভি, চ্যানেল ২৪, মাছরাঙা, নিউজ টুয়েন্টিফোরসহ বিভিন্ন টেলিভিশনে অনুষ্ঠিত হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় বরাবরই সেরা বিজয়ীদের শীর্ষে থাকে মারকাযের নাম। অতি শিগ্গির মারকাযে দাওরায়ে হাদিসসহ (মাস্টার্স) আরবি ভাষা ও সাহিত্য, ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য, ইসলামি আইন ও ফতোওয়া বিভাগ চালু হওয়ার কথা রয়েছে।
জনগণ ও রাষ্ট্রের প্রচেষ্টা ছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষার সামগ্রিক উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন সম্ভব নয় উল্লেখ করে মুফতি মুরতাজা বলেন, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা কওমি সনদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে এ দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। কওমি স্বীকৃতির সুফল ঘরে তুলতে হলে আলেম-ওলামা বিশেষত মাদ্রাসার দায়িত্বশীলদের মাদ্রাসার মূলনীতি, স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্র্যবোধ বজায় রেখে রাষ্ট্রের সঙ্গে যুগপথ এগিয়ে চলার অভ্যাস গড়তে হবে।
লেখক : আলেম ও ধর্মীয় নিবন্ধকার