![সিয়াম সাধনার আমল](https://cdn.jugantor.com/assets/news_photos/2021/04/23/image-414519-1619257907.jpg)
আমাদের অনেকের ধারণা রমজান মাস রোজা পালন ও তারাবি আদায়ের মাস। ব্যাস! আর কীসের আমল? দিনের বেলা পানাহার থেকে বিরত থাকছি এটা কম কি? না, ব্যাপারটা শুধু এটুকুতে সীমিত নয়।
রমজান একটি বিশাল বিদ্যাপীঠ। এ রমজানে আমরা কী কী নেক আমল করতে পারি তা নিম্নে আলোচনা করা হলো-
(১) কিয়ামুল লাইল : নবীজি (সা.) বলেন- ‘যে রমজান মাসে ইমান ও ইহতিসাবের সঙ্গে রাতের নামাজ আদায় করবে তার অতীতের পাপগুলো ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ রাতের নামাজ দ্বারা এখানে তারাবি ও তাহজ্জুদের নামাজ বোঝানো হয়েছে।
(২) কুরআন তিলাওয়াত: নবীজি (সা.) বলেছেন- ‘রোজা ও কুরআন কেয়ামতের দিন মানুষের জন্য সুপারিশ করবে...।’ হাদিসে এসেছে, রমজানে জিবরাইল নবীজি (সা.)কে কুরআন পাঠ করে শোনাতেন। আর নবীজি (সা.) পূর্ণ কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে জিবরাইলের কাছে তুলে ধরতেন। আল-কুরআন তিলাওয়াত হলো সর্বশ্রেষ্ঠ জিকির। যদি কেউ কুরআন তিলাওয়াত করতে অপারগ হন, তাহলে রমজান মাসে কুরআন তিলওয়াত শেখার চেষ্টা করতে হবে।
(৩) দান-সদকা: নবীজি (সা.) ছিলেন মানুষের মাঝে সবচেয়ে বেশি দানশীল। আর রমজানে তার বদান্যতা আরও বেড়ে যেত- অধিক পরিমাণে দান করতেন। আমাদের জন্য উত্তম কাজ হলো, রমজান মাসে বেশি করে দান-সদকা করা।
(৪) ইতিকাফ: নবীজি (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। আশ্চর্যের বিষয় হলো মুসলমানরা ইতিকাফ পরিত্যাগ করে অথচ নবীজি (সা.) মদিনায় আসার পর থেকে ইন্তেকাল পর্যন্ত কখনো ইতিকাফ পরিত্যাগ করেননি।
(৫) ওমরাহ হজ করা : রমজান মাসে ওমরাহ আদায় নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে হজ আদায়ের সমতুল্য।
(৬) রোজাদারদের ইফতার করানো: নবীজি (সা.) বলেছেন- যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে সে রোজাদারের অনুরূপ সওয়াব লাভ করবে, তবে রোজাদারের সওয়াব থেকে বিন্দুমাত্রও কমানো হবে না।’
(৭) অধিক পরিমাণে দোয়া করা : হাদিসে এসেছে, তিনজনের দোয়া কবুল করা হয়- রোজাদারের দোয়া, অত্যাচারিত ব্যক্তির দোয়া এবং মুসাফিরের দোয়া।
(৮) তওবা করা: সর্বদা তওবা করা আবশ্যক। এ মাসে তওবার অনুকূল অবস্থা বিরাজ করে। শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, জাহান্নাম থেকে মানুষকে মুক্তি দেওয়া হয়। এ কারণেই নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাস পেয়েও তার পাপ ক্ষমা করাতে পারেনি, তার নাক ধুলায় ধূসরিত হোক।’ তাই রমজান মাসকে তওবা ও ক্ষমা পাওয়ার মাস হিসাবে গ্রহণ করে সে অনুযায়ী আমল করা উচিত।
(৯) অধিক পরিমাণে নেক আমল করা : যখন রমজানের শেষ দশক এসে যেত, নবীজি (সা.) তখন রাত্রি জাগরণ করতেন, পরিবারবর্গকে নিদ্রা থেকে জাগিয়ে দিতেন, লুঙ্গি শক্ত ও ভালো করে বেঁধে প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন।’ তিনি রমজানের শেষ দশকে ইবাদত-বন্দেগিতে সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করতেন।’
(১০) ইলম শিক্ষা করা : ইসলামের সব ইবাদত-বন্দেগি সঠিকভাবে আদায় করতে হলে ইসলামি শিক্ষা অর্জন করতে হয়। এ ব্যাপারে কোনো ওজর-আপত্তি গ্রহণযোগ্য নয়। নামাজের নিয়মকানুন, রোজার বিধান, জাকাতের নিয়ম-নীতি, হজের আহকাম না শিখে এগুলো আদায় করা যায় না।
তাই রমজানের মোবারক এ সময়গুলোতে দ্বীনের প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জনে আমাদের মনোনিবেশ করা উচিত।
লেখক : হাফেজ, মাওলানা, মুফতি, লেখক ও গবেষক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ