কর্মক্ষেত্রে সাফল্যের চাবিকাঠি
জীবনে সফল হতে চান না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে সফলতা এবং চারিত্রিক সৌন্দর্য যে একটি আরেকটির পরিপূরক সে কথা অনেকেই জানেন না। আমাদের প্রিয় নবী (সা.) ছিলেন সফল মানুষ। ছিলেন অনুপম চরিত্রের অধিকারী। রাসূল (সা.)-এর অনন্য জীবনাচারের কতগুলো বৈশিষ্ট্য নিয়ে ‘কর্মক্ষেত্রে সাফল্যের চাবিকাঠি’ সাজিয়েছেন-

তোফায়েল গাজালি
প্রকাশ: ০৮ জানুয়ারি ২০২১, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

সালাম দেওয়া
সালাম শব্দের অর্থ শান্তি ও কল্যাণ কামনা। সালাম পরস্পরের মধ্যে হৃদ্যতা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও সম্প্রীতি তৈরি করে। এ জন্য আপনার বস, কলিগ, কর্মকর্তা-কর্মচারী বা কর্মস্থলে আগত সেবা গ্রহীতা সবাইবে নিয়মিত সালাম করুন।
এক ব্যক্তি রাসূল (সা.)-এর কাছে জিজ্ঞেস করল, ইসলামে কোন ‘আমলটি উত্তম? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, অপরকে খাবার খাওয়াবে এবং পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দেবে (সহিহ : বুখারি-১২)।
হাসিমুখে কথা বলা
সবার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলা প্রিয় নবী (সা.)-এর সুন্নাত। তাই কর্মক্ষেত্রে যার সঙ্গেই কথা বলার প্রয়োজন বোধ করেন তার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলুন।
কারও সঙ্গে হাসিমুখে কুশল বিনিময় করলে সদকার সওয়াব পাওয়া যায়। গুরুত্বপূর্ণ একটি ভালো কাজ হল অপর ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৭০)।
নম্র ব্যবহার করা
কর্মক্ষেত্রে দু’জন সহকর্মীর কাজকর্মের স্টাইল ও চিন্তাভাবনায় ভিন্নতা থাকাটাই স্বাভাবিক। নিজ আচরণে সর্বদা কোমলতা সহনশীলতার পরিচয় দিতে হবে। আল্লাহ পাক প্রিয় নবী (সা.) কে উদ্দেশ করে পবিত্র কুরআনে বলেন, আল্লাহর দয়ায় আপনি তাদের প্রতি কোমল-হৃদয় হয়েছিলেন যদি আপনি রূঢ় ও কঠোরচিত্ত হতেন তবে তারা আপনার আশপাশ থেকে সরে পড়ত।
কাজেই আপনি তাদের ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং কাজেকর্মে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করুন তারপর আপনি কোনো সংকল্প করলে আল্লাহর ওপর নির্ভর করবেন; নিশ্চয় আল্লাহ (তার ওপর) নির্ভরকারীদের ভালোবাসেন (সূরা আল ইমরান-১৫৯)।
সবাইকে সমান চোখে দেখা
একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কেউ হয়তো বয়েসে বড় হলেও পদের দিক থেকে ছোটো। আবার কেউ বয়সের দিক থেকে ছোটো হলেও যোগ্যতার দিক থেকে বড়ো হওয়ায় বড়ো পদে কর্মরত থাকেন। এটা ঠিক যে, কখনো কখনো দায়িত্বের কারণে কাউকে শাসন করতে হয়, কখনো কখনো শাস্তিও দিতে হয়।
এ ক্ষেত্রে লক্ষণীয় হল, দায়িত্বশীলকে ভাবতে হবে যে, কর্তব্যের খাতিরে আমাকে এ কাজ করতে হচ্ছে। এ জন্য নয় যে, আমি বড়ো, সে ছোটো। কারণ এমনতো হতে পারে, তার মর্যাদা আল্লাহর কাছে আমার চেয়ে বেশি।
আল্লাহ বলেন, তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়া সম্পন্ন। নিশ্চয় আল্লাহ তো সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত (সূরা হুজরাত আয়াত-১৩)।
অপরের দোষত্রুটি গোপন রাখা
প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষতির শঙ্কা না থাকলে যথাসম্ভব আপনার সহকর্মীর দোষত্রুটি গোপন রাখুন। আল্লাহ বলেন- হে মুমিনগণ, তোমরা অধিক অনুমান থেকে দূরে থাক। নিশ্চয় কোনো কোনো অনুমান তো পাপ। আর তোমরা গোপন বিষয় অনুসন্ধান করো না এবং একে অপরের গিবত করো না (সূরা হুজরাত-১২)।
সহকর্মীর সঙ্গে প্রতিবেশীসুলভ আচরণ
সহকর্মী আপনার প্রতিবেশীর মতো। তাই প্রতিবেশী হিসেবে একে অপরের কাছ থেকে সর্বোত্তম আচরণ পাওয়ার অধিকার রাখেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর নিকট সেই প্রতিবেশী সর্বোত্তম, যে তার প্রতিবেশীর দৃষ্টিতে সর্বাধিক উত্তম’ (তিরমিযি ১৯৪৪)।
মানুষের জীবনে বিপদ আপদ অসুস্থতা খুব স্বাভাবিক বিষয়। তাই বিপদ আপদ, অসুস্থতাজনিত সময়ে একে অপরের কাজে সর্বাÍক সহায়তা করুন।
পরস্পরে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন
কৃতজ্ঞতা ছোটো একটি শব্দ। এর বিনিয়োগ খুবই অল্প কিন্তু প্রাপ্তি বিশাল। হয়তো ধন্যবাদ, থ্যাংকইউ, যাযাকুমুল্লাহ। এই তো এটুকুই। আল্লাহতায়ালা বলেন, যদি তোমরা শোকর আদায় করো- আমি তোমাদের আরও বাড়িয়ে দেব।
আর যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে আমার শাস্তি অতি কঠোর (সূরা ইবরাহিম-৭)। কৃতজ্ঞ ব্যক্তি দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ লাভে ধন্য হবে। আল্লাহ বলেন, আল্লাহ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনকারীদের অচিরেই প্রতিদান দেবেন (সূরা আল ইমরান-১৪৪)।