Logo
Logo
×

বিচ্ছু

মলাট বৃত্তান্ত

ময়না তদন্তের ময়নার মতে বিশ্বকাপ ব্যর্থতার কারণগুলো

Icon

সত্যজিৎ বিশ্বাস

প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কেন এই ভরাডুবি? তদন্তে মাঠে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে ময়নাকে। শুধু তাই না, চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। ময়না অবশ্য অনেক চেষ্টা করছে দায়িত্বটা পশু, পাখি অন্য কারও কাঁধে তুলে দিতে। কিন্তু কাজ হয়নি। কাকের কাছে গিয়ে অনুরোধ করায় কাক ঝাড়ি মেরে বলেছে, এটা কি কাউয়া তদন্ত? আমি করতে যাব কোন দুঃখে? বাঘের কাছে গিয়ে তদন্ত কথাটা বলামাত্রই দন্ত বের করে দিয়েছে ধাওয়া।

জাস্ট ফ্রেন্ডদের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ময়না গেল বেস্টফ্রেন্ড টিয়ার কাছে। সব শুনে টিয়া বলল, ‘ময়নাতদন্ত বলে কথা। ময়না কথা কয় না বললে তো আর হয় না। চলো দুজন মিলে ভাবী, কী করা যায়!’

বিশ্বকাপের এ ‘ক্রিকেটডুবি’র কারণটা বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের জিজ্ঞাসা করলে কেমন হয়? ময়না প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে টিয়া বলল, ‘ওদের মাথা এমনিতেই গরম হয়ে আছে। কাছে গেলে রোস্ট হয়ে যেতে পারো।’ ঢোক গিলে ময়না বলল, ‘তাহলে ক্রিকেট বোর্ড কর্মকর্তাদের কাছে গেলে কেমন হয়? ওরা তো সব জানে।’

টিয়া হেসে বলল, ‘ও পর্যন্ত যাবার সুযোগ কই?’ ময়না এবার রেগে যায়, ‘তাহলে তদন্ত করব কী করে? প্রশ্ন করব কাকে?’

একটু ভেবে টিয়া হিয়া কাঁপিয়ে হেসে বলল, ‘কাউকে কোনো প্রশ্ন করতে হবে না। তুমি এক কাজ করো, বাজারের ওই পাকুড় গাছটা আছে না, ওটার ডালে গিয়ে বসো। গাছটার নিচে চায়ের দোকানে যে আড্ডা হচ্ছে মন দিয়ে সবার কথা শোনো। চায়ের দোকানে যে ক্রিকেট বোদ্ধারা বসে তাদের চেয়ে ভালো ক্রিকেটযোদ্ধারাও জানে না। সবার কথা মন দিয়ে শুনে বিকালে ওগুলো লিখে রিপোর্ট জমা দিয়ে এসো।’

কিছু বলতে গিয়ে ঘড়ির দিকে তাকায় ময়না। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে চার ঘণ্টা চলে গেছে। কথা না বাড়িয়ে ময়না কাগজ-কলম নিয়ে উড়ে যায় পাকুড় গাছের ডালে।

চায়ের কাপ হাতে নিচে তখন চলছে পাঁচ-ছয়জন ক্রিকেটবোদ্ধার বাকযুদ্ধ।

১ম বোদ্ধা : এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ কি খেলতে গেছে না অন্য টিমগুলারে উৎসাহ দিতে গেছে বুঝলাম না। এমন খেলার কারণটা কী?

২য় বোদ্ধা : আর কারণ! কারণ খুঁজতে খুঁজতে তো তিন যুগ শেষ। আরও কয় যুগ যাবে, কে জানে? তবু কারণ খুঁজে পাওয়া যাবে না। সাবানের বিজ্ঞাপনের ধুতে থাকো ধুতে থাকো-এর মতো সোশ্যাল মিডিয়ায় ধোয়াধুয়ি পর্যন্তই সার। মাঝে মাঝে নেপাল, জিম্বাবুয়ে, হংকং, কেনিয়া বড়জোড় নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে দু-একটা ম্যাচ জিতে আনন্দে লাফালাফি চলবে। তারপর আবেগী স্ট্যাটাস দেবে-কারণ খোঁজা বারণ।

৩য় বোদ্ধা : আরে শোন, বাংলাদেশ ক্রিকেট খেলছে ফুটবলের আদলে। ফুটবলে সেরা টিমগুলো যেমন টোটাল ফুটবল খেলে, কারও কোনো নির্দিষ্ট পজিশন থাকে না-বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমেরও সে অবস্থা। ব্যাটিং অর্ডারে কারও কোনো নির্দিষ্ট পজিশন নেই। সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন টিম মনোভাব যাকে বলে।

৪র্থ বোদ্ধা : কারণ বুঝিস না, নাকি খুঁজিস না? টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার ২৩ বছর পরও ক্রিকেটের টেস্ট, ধারাবাহিক ম্যাচ জেতার টেস্ট, জিহ্বা দিয়ে চাটাচাটি করেও পাচ্ছি না। কেন পাচ্ছি না সে এক রহস্য। এদিকে প্লেয়ারদের পজিশন টেস্ট চলছে তো চলছেই। ৭টা বিশ্বকাপ খেলার পরও আমরা বুঝতে পারি না, বিশ্বকাপের প্রস্তুতি কীভাবে নিতে হয়! অথচ সদ্য বিশ্বকাপ খেলতে আসা আফগানিস্তান বোঝে, নেদারল্যান্ডস বোঝে।

৫ম বোদ্ধা : যে দলে খেলোয়াড় অধিনায়কের কথা শোনে না, অধিনায়ক খেলোয়াড়কে গোনে না; কোচ, ম্যানেজার, নির্বাচক কারও সঙ্গে কারও বনে না, সে দল যে বিশ্বকাপ খেলেছে এটাই তো অষ্টম আর্শ্চযের বিষয়। মনে রাখতে হবে, জেতা নয়, প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করাটাই বড় কথা।

যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা ২৪ ঘণ্টায়, সে রিপোর্ট ২৪ মিনিটেই রেডি করে উড়ে যেতে যেতে ময়না ভাবে, বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম পারে না কী? শুধু ব্যাটসম্যানরা মাঠে ভালোভাবে সেট হতে পারে না, বোলাররা খুব একটা উইকেট নিতে পারে না, আর ফিল্ডাররা বেশি করে ক্যাচ ধরতে পারে না। এ ছাড়া আর সবই তো পারে!

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম