Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

ভালো নেই লাউয়াছড়া

Icon

নূরুল মোহাইমীন মিল্টন

প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ভালো নেই লাউয়াছড়া

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। ফাইল ছবি

বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকসহ বিরল প্রজাতির অনেক বন্যপ্রাণী, উদ্ভিদ ও বৃক্ষরাজিসমৃদ্ধ একটুকরো বন মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। নানা কার্যক্রমের ফলে এ উদ্যানটি এখন আর ভালো নেই। এ বনের ওপর অত্যাচার উত্তরোত্তর বাড়ছে। বন বিনাশ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। গাছ ও বাঁশ উজাড় হয়ে যাওয়ায় বন্যপ্রাণীর খাবার ও বাসস্থান সংকট প্রকট হচ্ছে।

লাউয়াছড়া এলাকায় ১৯৯৭ সালে মাগুরছড়া গ্যাসকূপ বিস্ফোরণের পর বন্যপ্রাণী ও লতা-গুল্ম থেকে শুরু করে বন ও পরিবেশের যে ক্ষতি হয়েছে, তা আজও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীকালে ২০০৮ সালে ত্রিমাত্রিক ভূতাত্ত্বিক জরিপ কার্যক্রম আরেক দফা বনের ক্ষতির কারণ হয়।

এ সময় বনের আশপাশের বাড়িঘর ও মসজিদে ফাটলের চিহ্ন দেখা দেয়। এছাড়া উদ্যানের ভূমি বেদখল হচ্ছে। বনের ভেতরে চাষাবাদ চলছে। পর্যটকের উপস্থিতি বেড়েছে অনেক বেশি। গাড়ির শব্দ, মাইকের আওয়াজ ও দল বেঁধে পর্যটকদের আনন্দ-উল্লাস বনের প্রাণীর চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।

এ বনের ভেতর দিয়ে চলে গেছে ঢাকা-সিলেট রেল ও সড়কপথ। ফলে এদিক-সেদিক ছোটাছুটির কারণে প্রাণীর মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না। উদ্যানের ভেতর দিয়েই গেছে ৩৩ হাজার কেভি বিদ্যুৎ লাইন। লাফালাফির সময় বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে প্রাণী মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে।

এরপরও বনের ভেতর দিয়ে বিভিন্ন স্থানে নতুন নতুন বিদ্যুৎ লাইন স্থাপনের কার্যক্রম থেমে নেই। বনের টিলা, ঢালু ভূমিতে ছোট-বড় নানা প্রজাতির গাছ এতদিন পর্যন্ত মাটি আঁকড়ে প্রকৃতিকে রক্ষা করেছে। অতিবৃষ্টি, ভারি বৃষ্টি, ঝড়-তুফানেও তেমন প্রভাব পড়তে শোনা যায়নি। ঘন ও অন্ধকারাচ্ছন্ন বনের ভেতর দিয়েই ট্রেন ও যানবাহন যাতায়াত করেছে।

তবে বর্তমানে মাঝে মধ্যে অতিবৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসে গাছ উপড়ে পড়ছে। টিলাভূমি ধসে পড়ছে। গাছ পড়ে কিংবা টিলা ধসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকা থাকছে ট্রেন। গত দু’বছরে একাধিকবার এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। মাঝে-মধ্যে শিকারিদের অপতৎপরতাও লক্ষ করা যায়।

১৯৯৬ সালে কমলগঞ্জের সংরক্ষিত বনের পশ্চিম ভানুগাছের ১২৫০ হেক্টর জায়গা নিয়ে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়। উদ্যান ঘোষণার পর এটি দেখভালের দায়িত্ব গ্রহণ করে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ। পাশাপাশি জাতীয় উদ্যান সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটি ও ইউএসআইডির অর্থায়নে ‘নিসর্গ’ কার্যক্রম শুরু করে।

সে সময় গবেষণায় লাউয়াছড়ায় ৪৬০ প্রজাতির প্রাণবৈচিত্র্যের ভেতর ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি, ২০ প্রজাতির স্তন্যপ্রায়ী প্রাণী এবং ১৭ প্রজাতির পোকামাকড় শনাক্ত করা হয়। পরবর্তী সময়ে আর কোনো গবেষণা হয়নি। ফলে বর্তমান সময় পর্যন্ত এসব তথ্যই উপস্থাপিত হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা আর আশপাশ এলাকায় বসবাসরত মানুষের মতে আগের লাউয়াছড়া আর নেই। বন হারিয়ে ফেলেছে তার জৌলুস। বর্তমানে বনে প্রাণীর সংখ্যা কত তারও সঠিক হিসাব নেই। ট্রলি বানিয়ে বনের গাছ কেটে রেলপথ দিয়ে পাচারের ঘটনাও ঘটেছে। বন গবেষণা কেন্দ্র থাকলেও সেটির জরাজীর্ণ দশা।

বনের ওপর নানামুখী অত্যাচার মোকাবেলায় দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে অল্পকিছু লোক দিয়ে সেখানে উদ্যান রক্ষার যে চেষ্টা তা আর বেশিদূর এগোবে না বলে অনেকের ধারণা। এখনও সময় আছে লাউয়াছড়ার জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণের।

নূরুল মোহাইমীন মিল্টন : প্রাবন্ধিক

miltonpress@gmail.com

 

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম