অডিট আপত্তিতে বিপুল অর্থ: দ্রুত নিষ্পত্তি ও অর্থ আদায় হোক
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সরকারি অর্থব্যয়ে অনিয়মের ঘটনা নতুন নয়। এবার সরকারের অডিটেই বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন প্রকল্প ও রাজস্বসহ নানা খাতে বিশাল অঙ্কের আপত্তির তথ্য উঠে এসেছে। শুক্রবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, ৮৭ লাখ কোটি টাকার অডিট আপত্তির বিপরীতে গেল ১৩ বছরে আদায় হয়েছে মোটে ৭৩ হাজার কোটি টাকা। এসব অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ ঘটনায় বেসিক ব্যাংকের ৩৯৮ কোটি টাকার অনিয়ম ধরা পড়ে। এর আগে একই ব্যাংকের ঋণ অনিয়ম ধরা পড়ে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। অপরদিকে জমি অধিগ্রহণের পাওনা ঘিরে ৪ হাজার ৭৯২ কোটি টাকার অনিয়ম শনাক্ত হয় ২৪টি ডিসি কার্যালয়ে। কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য সরঞ্জাম কেনাকাটাসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন প্রকল্প, জ্বালানি তেল ক্রয়, ব্যাংক ও রাজস্ব খাত ঘিরে অনিয়ম ধরা পড়ে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। সরকারি অর্থ ব্যয়ে আর্থিক অনিয়ম ও আপত্তির অঙ্ক ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ৮৭ লাখ ৭৫ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা, যা জাতীয় বাজেটের তুলনায় ১৩ গুণ বেশি।
বোঝাই যাচ্ছে, সরকারি অর্থ ব্যয় ঘিরে যে হারে অনিয়ম বাড়ছে, এর বিপরীতে আদায় খুবই কম। যদি আদায় পুরোপুরি সম্ভব হতো তাহলে তা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হতো। এ অর্থ স্বল্পমেয়াদে বর্তমান সরকারের চলমান আর্থিক সংকট লাঘবে কার্যকর ভূমিকা রাখার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে বাজেট ঘাটতি মেটাতেও বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারত হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয় (সিএজি) সূত্র জানিয়েছে, জনবলের অভাবে বর্তমানে সরকারি মোট ব্যয়ের মাত্র ৭ শতাংশের উপর অডিট করা সম্ভব হচ্ছে। বাকি ৯৩ শতাংশ ব্যয় অডিটের বাইরে থাকছে। যদিও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড হচ্ছে-সরকারি মোট ব্যয়ের ২০ শতাংশের ওপর অডিট করা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে অনিয়ম হলে যে আপত্তি দেওয়া হয়, সেই আপত্তির অর্থ ঠিকমতো আদায় হয় না। অবশ্য অডিট আপত্তি মানে পুরোটাই যে দুর্নীতি বা অনিয়ম, তা নয়। অডিট আপত্তিগুলো সিএজি কর্তৃক অর্থ ব্যয়ের ত্রুটি-বিচ্যুতির একটি প্রাক্কলন মাত্র। তবে আপত্তি ও আদায়ের মধ্যে যে ফারাক, এটি বিশাল। এ ব্যাপারে সিএজি অফিসের কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আপত্তির বিষয়ে অনুসন্ধান করে জড়িত ব্যক্তিদের জবাবদিহি যেন নিশ্চিত করা যায়, সে পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি সরকরি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি এসব রিপোর্ট পর্যালোচনা করে অর্থ আদায়ে নির্দেশনা ও তা বাস্তবায়নে আরও কঠোর হবে, এটাই প্রত্যাশা।