সিলেটে তেলের সন্ধান
উত্তোলনে দক্ষ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা কাম্য
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
দেশে তেলের খনি সন্ধানের খবর স্বভাবতই আনন্দের। সিলেট গ্যাসক্ষেত্রের ১০ নম্বর কূপ খনন করে প্রথম স্তরে তেলের সন্ধান পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এ কূপ থেকে দৈনিক ৫০০ থেকে ৬০০ ব্যারেল তেল পাওয়া যাবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছেন, মজুত থাকা এ গ্যাস ও তেলের আর্থিক মূল্য প্রায় ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা; যদিও তেল মজুতের সম্পূর্ণ তথ্য জানতে আরও চার থেকে পাঁচ মাস অপেক্ষা করতে হবে।
পাশাপাশি ওই কূপের তিনটি স্তরে নতুন গ্যাসের সন্ধানও পাওয়া গেছে। উল্লেখ্য, সিলেট তামাবিল-জাফলং মহাসড়কের পাশে গোয়াইনঘাট উপজেলার আলীরগাঁও ইউনিয়নের বাঘের সড়ক এলাকায় অবস্থিত এ কূপে দুই মাস আগে অনুসন্ধানের লক্ষ্যে খননকাজ শুরু করে সরকারি প্রতিষ্ঠান সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড কোম্পানি। ১৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কূপটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। জানা যায়, এ কূপে জ্বালানির মোট চারটি স্তরের সন্ধান পাওয়ার পর মজুতের বিষয়টি নিশ্চিতের জন্য আপাতত তা বন্ধ রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশে খনিজ তেলের আবিষ্কার অবশ্য এটাই প্রথম নয়। আশির দশকের শেষদিকে হরিপুর ফিল্ডে প্রথম তেল আবিষ্কৃত হয়। বলা বাহুল্য, বিশ্বে যখন জ্বালানি সংকট বাড়ছে, তখন নতুন আবিষ্কার হওয়া তেলের খনি আমাদের জন্য একটি সুসংবাদ। অন্তত এ তেল অভ্যন্তরীণ চাহিদার কিছুটা হলেও মেটাবে বলে আশা করা যায়। দেশে গ্যাস-বিদ্যুতের চাহিদা ক্রমবর্ধমান। তবে সবচেয়ে বড় যে চ্যালেঞ্জটি সামনে রয়েছে তা হলো উত্তোলন। অবহেলা ও অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে সরকারি সম্পদ, জনগণের মালিকানাধীন প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয়ের নজির অতীতে আমরা দেখেছি।
গাফিলতি ও নানা অনিয়মের কারণে অতীতে দেশের অনেক সমৃদ্ধ গ্যাসক্ষেত্র সংকটের মুখে পড়েছে। আবার দক্ষ জনবল ও প্রযুক্তির অভাবে বিদেশি সংস্থাকে কাজ দিয়ে লাভের অধিকাংশই তাদের হাতে তুলে দেওয়ার ইতিহাসও আছে। অন্যদিকে দেশি কোনো সংস্থাকে কাজ দিতে গেলেও প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে দরপত্র আটকে যাওয়ার মতো ঘটনাও আমরা দেখেছি। এমন প্রেক্ষাপটে তেলের খনির সন্ধানের খবর আনন্দের হলেও তা উত্তোলন ও বাজারজাতের বিষয়টি সুষ্ঠু না হলে দেশের এ সম্পদ হতাশা ও নিরানন্দের কারণও হয়ে উঠতে পারে।
ছোট আয়তনের দেশ হওয়ার কারণে আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদের ঘাটতি সর্বজনস্বীকৃত। এ অবস্থায় সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার ওপর জোর দেওয়া বাঞ্ছনীয়। খনির তেলের সুষ্ঠু আহরণে আগে থেকেই তাই সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের গাফিলতি ও অনিয়ম-দুর্নীতি কাঙ্ক্ষিত নয়।
তেলের খনির পাশাপাশি যেহেতু গ্যাসেরও সন্ধান মিলেছে, ফলে সেখানেও স্বল্প ব্যয়ে সর্বোচ্চ আহরণের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক হতে হবে। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, গ্যাস খাতে অতীতে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য উদ্ঘাটন এবং দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, তা জোর দিয়ে বলা যাবে না। এ অবস্থায় অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি সরকার প্রাকৃতিক সম্পদের আহরণ ও এর সঠিক ব্যবহারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।