পাঠ্যবই মুদ্রণ
মান ও সময় দুটিতেই গুরুত্ব দিতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
নিম্নমানের কাগজে ছাপা অনুজ্জ্বল বই শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণের অভিযোগে চলতি শিক্ষাবর্ষে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিল জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
অনেক শিক্ষার্থীর হাতেই বই পৌঁছেছিল বেশ দেরিতে। সংশ্লিষ্ট সবাই আশা করেছিল, এনসিটিবি আগামী দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে নির্ভুল ও মানসম্মত বই সময়মতো পৌঁছাতে সক্ষম হবে। দুঃখজনক হলো, আগামী বছরের বইয়ের মান নিয়েও দেখা দিয়েছে শঙ্কা। তবে আগামী শিক্ষাবর্ষে যথাসময়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে বই পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে এনসিটিবি কর্তৃপক্ষ।
নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে বাকি দেড় মাসের মতো। এবার শিক্ষার্থীদের জন্য ছাপাতে হবে প্রায় ৩১ কোটি পাঠ্যবই। কিন্তু এখনো সব শ্রেণির বইয়ের মুদ্রণচুক্তি সম্পন্ন করতে পারেনি এনসিটিবি। আগামী শিক্ষাবর্ষে অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে শুরু হচ্ছে নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠদান। এসব বই এখনো মুদ্রণে যায়নি। ফলে মাধ্যমিক স্তরের ১২ কোটির বেশি বই ছাপার কাজ শুরু হয়নি। এদিকে প্রাথমিকেরও কয়েক কোটি বই ছাপার কাজ বাকি। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক মিলে ১৫ কোটির বেশি বই ছাপানো বাকি রয়েছে।
ফলে বছরের শুরুতে কয়েকটি শ্রেণির শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, নতুন কারিকুলামের নবম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ শুরু করা যায়নি। এছাড়া ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইটিও ছাপানোর কাজ শুরু হয়নি। সেজন্য সংখ্যাটি বেশি মনে হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সব বই ছাপার কাজ শেষ হবে বলে মনে করছে এনসিটিবি কর্তৃপক্ষ।
মানসম্মত ও নির্ভুল পাঠ্যবই প্রণয়ন যেন একটি অসাধ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এত আলোচনা-সমালোচনার পরও পাঠ্যবইয়ে ভুল ও অসংগতি কেন দূর হচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের পুরো প্রক্রিয়ায় হযবরল অবস্থা সৃষ্টি হবে, ভুল তথ্য ছাপার পর সংশ্লিষ্টরা ভুল স্বীকার করে বিবৃতি দেবেন, দুঃখপ্রকাশ করবেন-এ প্রবণতা কাটিয়ে উঠতে হবে। সরষের ভেতর ভূত রয়েছে কি না, খতিয়ে দেখতে হবে।
এনসিটিবির সূত্র জানায়, গত শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিকের বই ছাপানো নিয়ে যেহেতু বড় ধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছিল, সেহেতু এবার কাজ আগে শুরু হয়েছে। এ কারণে মাধ্যমিকের বই ছাপাতে কিছুটা দেরি হয়েছে। এ যুক্তি কতটা গ্রহণযোগ্য? সময়মতো বই না পেলে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন।
আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। মানসম্মত ও ত্রুটিমুক্ত বই সময়মতো শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া সম্ভব না হলে তাদের দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরের কাজে জটিলতা সৃষ্টি হবে। এনসিটিবির পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন প্রকল্পে অযোগ্য ব্যক্তিরা যাতে অন্তর্ভুক্ত হতে না পারে, সেদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে।
অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে এনসিটিবির পাঠ্যপুস্তক প্রকল্পকে ত্রুটি ও দুর্নীতিমুক্ত করার পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকার প্রতিবছর ১ জানুয়ারি উৎসবমুখর পরিবেশে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যের বই তুলে দিচ্ছে। এ প্রশংসনীয় উদ্যোগ যাতে সার্থক হয়, সেজন্য যা যা করা দরকার সবই করতে হবে।