নদী রক্ষায় কমিশনের উদ্যোগ
দখলদার উচ্ছেদ এবং দূষণবিরোধী অভিযান জরুরি
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দেশে নদনদীর তালিকা প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করেছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। ওই তালিকায় নদনদীর সংখ্যা এক হাজার আটটি, আর দৈর্ঘ্য প্রায় ২২ হাজার কিলোমিটার। যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, শিগগিরই ওইসব নদনদীর নাম গেজেট আকারে প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে কমিশনের। এটি ভালো উদ্যোগ অবশ্যই। একই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থান, বিশেষ করে শহরাঞ্চলে নানা রকম প্রভাব খাটিয়ে নদী ও খালের তীরবর্তী স্থান দখলে নিয়ে যারা বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন রকম স্থাপনা নির্মাণ করেছে, তাদের বিরুদ্ধেও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরের ভেতরের ও আশপাশের নদী-খালগুলোর দখল এবং দূষণের বিষয়টি নিয়ে বেশি আলোচনা হলেও বাস্তবতা হলো, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এ অশুভ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, নদী-খালের জমি দখলদারদের সঙ্গে স্থানীয় ভূমি অফিসের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশ রয়েছে। এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধেও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। নদী দখলের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের কোনো নেতাকর্মী যুক্ত আছেন কি না তা-ও খতিয়ে দেখতে হবে। সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে নদনদী, খালবিল অবৈধভাবে দখল হয়ে যাওয়ার কারণে পানিপ্রবাহের গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে; নদনদী সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে। এতে বর্ষাকালে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি অনেক স্থানে বৃষ্টির পানি জমে ফসল ও বাড়িঘর তলিয়ে যায়। কোনো কোনো স্থানীয় প্রভাবশালী দখলদার ভুয়া দলিল ও কাগজপত্র তৈরি করে মালিকানা স্বত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টাও চালিয়ে যায়। তবে যেভাবেই দলিল করা হোক না কেন, কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ নিলে নদী রক্ষা আইন অনুযায়ী তীরের দখলকৃত জায়গা যে কোনো সময় উদ্ধার করা সম্ভব। আবার সারা দেশের নদীগুলোর ভয়াবহ দূষণের বিষয়টিও বহুল আলোচিত। অভিযোগ রয়েছে, পরিশোধন যন্ত্র থাকলেও কোনো কোনো কারখানায় বর্জ্য পরিশোধন না করে সরাসরি তা ফেলে দেওয়া হয়। এতে বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ আমাদের খাদ্যচক্রে প্রবেশ করার সুযোগ তৈরি হয়। তাই দেশের সব নদী, বিল ও খালের অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ এবং দূষণবিরোধী অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি উচ্ছেদ অভিযানের পর আবারও যাতে দখলের প্রক্রিয়া শুরু না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দখলদাররা এতটাই বেপরোয়া হয়ে ওঠে যে, তারা নদীতীরের সীমানা পিলার পর্যন্ত উপড়ে ফেলে দেয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দখলদারদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করে থাকে স্থানীয় প্রভাবশালীদের একটি অংশ। বস্তুত দেশের সব নদী ও খালই দখলের শিকার হয়েছে। বিদ্যমান যেসব নদী ইতোমধ্যে মরা খালে পরিণত হয়েছে, সেসব উদ্ধারে জরুরি ভিত্তিতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যেভাবে বাড়ছে, তাতে আগামী দিনে সড়ক-মহাসড়কে যানজট যে আরও প্রকট আকার ধারণ করবে, এটি সহজেই অনুমান করা যায়। এ প্রেক্ষাপটে দেশের নৌরুটের সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি বিদ্যমান নৌরুটের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করলে আগামী দিনে সড়ক-মহাসড়কে যানবাহনের চাপ অনেকটাই কমবে। এতে একদিকে যেমন যানজটের কষ্ট থেকে মানুষ রেহাই পাবে; একই সঙ্গে সময়মতো পণ্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পাঠানো সম্ভব হবে। নদীর নাব্য সংকট দূর করতে খনন ও বর্জ্য অপসারণের পাশাপাশি যেখানে নদীর প্রশস্ততা কম, সেখানে তা বাড়াতে কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ নেবে-এটাই প্রত্যাশা।