রপ্তানির আড়ালে অর্থ পাচার
ফাঁকগুলো বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দেশ থেকে অভিনব কৌশলে বিদেশে অর্থ পাচারের বিষয়টি বহুল আলোচিত। ওভার ইনভয়েসিং (আমদানিতে মূল্য বেশি দেখানো) এবং আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের (রপ্তানিতে মূল্য কম দেখানো) মাধ্যমে অর্থ পাচারের বিষয়টিও বারবার আলোচনায় আসে। ইএক্সপি (রপ্তানি অনুমতিপত্র) জালিয়াতির মাধ্যমেও বিদেশে অর্থ পাচার করা হতো।
চলতি বছরের মার্চে রপ্তানি অনুমতিপত্র জালিয়াতির মাধ্যমে চার প্রতিষ্ঠানের ৩৮৪ কোটি টাকা পাচারের তথ্য উদ্ঘাটন করেছেন শুল্ক গোয়েন্দারা। সম্প্রতি তারা প্রকাশ করেছেন তৈরি পোশাক রপ্তানির নামে ১৯টি প্রতিষ্ঠানের ১৪৭ কোটি টাকা পাচারের চাঞ্চল্যকর তথ্য। পণ্যের মূল্য অবিশ্বাস্য কম দেখিয়ে আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে এ পরিমাণ অর্থ পাচার করা হয়েছে।
রপ্তানি চালানসংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ইস্যু করা রপ্তানি অনুমতিপত্র ঠিক থাকলেও অতি নিম্নমূল্যে ৫ হাজার ৭৫৭ টন তৈরি পোশাক রপ্তানি করা হয়েছে। পণ্য চালানগুলো রপ্তানির মাধ্যমে ১৪৭ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছেন কাস্টমস গোয়েন্দারা। জানা যায়, রপ্তানি অনুমতিপত্র ঠিক থাকলেও পণ্যের মূল্য অনেক কম দেখানো হয়েছে; কোনো কোনো ক্ষেত্রে পণ্যের রপ্তানি মূল্যের ৮-১০ গুণ কমও দেখানো হয়েছে। এতে পণ্য রপ্তানির বিপরীতে প্রকৃত মূল্য দেশে আসেনি। বস্তুত বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে অতীতেও দেশে থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচার হয়েছে। হুন্ডির মাধ্যমেও প্রচুর অর্থ বিদেশে পাচার হয়। সব তথ্য বিবেচনায় নিয়ে অর্থ পাচার রোধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
সাধারণত রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থির হলে অর্থ পাচারের প্রবণতা বেড়ে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকলেও অনিশ্চয়তা রয়েছে; পরিস্থিতি যে কোনো সময় অস্থির হতে পারে এ আশঙ্কা রয়েছে। কাজেই দেশে যাতে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি না হয় সেজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। দেশে পরমতসহিষ্ণুতার চর্চা না বাড়ালে টাকা পাচারের প্রবণতা কমবে কিনা সে বিষয়ে সংশয় থেকেই যায়। রাজনৈতিক সহিংসতা বাড়লে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের বিষয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এমন পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কেউ কেউ টাকা পাচারে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। কাজেই দেশে রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধে রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। অর্থ পাচার রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে বাড়তি সতর্কতা। কীভাবে কোন কোন চ্যানেলে অর্থ পাচার হচ্ছে, তা সঠিকভাবে চিহ্নিত করে সব ফাঁকফোকর বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনাটাও জরুরি।