অর্থব্যয়ে সরকারের লাগাম
বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বৈশ্বিক সংকটের প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তিসংগতভাবেই দেশবাসীকে মিতব্যয়ী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। সরকারি সংস্থাগুলোকে সব ধরনের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় তথা অপচয় কমাতেও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তবে সরকারি অর্থব্যয়ে লাগাম টানার কথা বলা হলেও বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রে ভিন্নচিত্র পরিলক্ষিত হয়েছে। খোদ অর্থ বিভাগের পর্যবেক্ষণ বলছে, অর্থসাশ্রয়ে অনেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগই উদাসীন। অনেক মন্ত্রণালয় এই সংকটের মধ্যেও রাস্তা নির্মাণ, নতুন ভবন নির্মাণ, স্থাপনা খাতে ব্যয় করছে।
এ খাতে অর্থব্যয়ের জন্য অর্থ বিভাগের অনুমোদনও চাচ্ছে। থেমে নেই বিদেশ ভ্রমণও! এমন অবস্থায় নতুন অর্থবছরের শুরুতেই অর্থ বিভাগ কয়েকটি খাতের ব্যয়ের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে বলে জানা গেছে। অর্থ বিভাগের জারি করা পরিপত্রের বরাত দিয়ে সোমবার যুগান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় বেশ কয়েকটি খাতের অর্থব্যয়ে লাগাম টানা হয়েছে। অর্থ বিভাগ নতুন অর্থবছরের শুরুতেই যেসব খাতের ব্যয়ের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সব ধরনের ভূমি অধিগ্রহণ, সরকারি সব ধরনের আবাসিক ও অনাবাসিক ভবন নির্মাণ, সরকারি অফিস-আদালতের জন্য নতুন যানবাহন কেনা, সরকারি চাকরিজীবীদের বিদেশ ভ্রমণ ইত্যাদি। এছাড়া অর্থসাশ্রয়ের লক্ষ্যে বিদ্যুৎ খাতে মোট বরাদ্দের ২৫ শতাংশ এবং জ্বালানি খাতের ২০ শতাংশ ব্যয়ও স্থগিতের আওতায় আনা হয়েছে।
অবশ্য অর্থবছরের শুরুতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বলা হচ্ছে, সরকারের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্য থেকেই এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কৃচ্ছ্রসাধন কর্মসূচির আওতায় এ উদ্যোগের প্রয়োজনও নাকি ছিল। কারণ, এর ফলে যে অর্থসাশ্রয় হবে, সেই অঙ্কের ঋণ করতে হবে না। অর্থাৎ সাশ্রয়ের সমপরিমাণ ঋণ কমবে, ফলে সুদব্যয়ও কমবে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় দিনে এ ধরনের উদ্যোগের দরকার ছিল না। বাজেট প্রণয়নের সময় খাতওয়ারি বরাদ্দ কমিয়ে বাজেট প্রণয়ন করা হলে আরও ভালো হতো। কারণ, ওই সময়ে যে অর্থসাশ্রয় হতো, তা অন্য খাতে বরাদ্দ দেওয়া যেত।
সরকারি ব্যয়ে এমন কৃচ্ছ্রসাধনের উদ্যোগ যৌক্তিক হলেও বাস্তবে তা পরিপালিত হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। কারণ, গেল অর্থবছরে সরকারি চাকরিজীবীদের বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ করা হলেও বাস্তবে বিপুল অর্থ খরচ করে অনেকেই বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। কোনো কোনো বিদেশ ভ্রমণের কারণ ছিল অযৌক্তিক। এছাড়া আরও অনেক ক্ষেত্রে অপচয় বা বাহুল্য ব্যয় লক্ষ করা গেছে। উপরন্তু দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। ফলে দেখা যাচ্ছে, কৃচ্ছ্রসাধনের কথা বলা হলেও সরকারের তহবিল থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থ ঠিকই ব্যয় হচ্ছে। আবার অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসী ব্যয় সংকোচনের পথে সরকার হাঁটলেও দেখা যাচ্ছে, একশ্রেণির সুবিধাভোগী কর্মকর্তা সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে প্রকল্প বাস্তবায়নের আড়ালে নিজেদের ‘সুবিধা’ ঠিকই হাসিল করে নিচ্ছেন। এ ধরনের কর্মকাণ্ড শক্ত হাতে দমন করা প্রয়োজন। আবার কৃচ্ছ্রসাধনের নামে ব্যয় কমাতে গিয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ড যাতে ব্যাহত না হয়, সেদিকেও সরকারকে খেয়াল রাখতে হবে।