দুদকের জালে বাচ্চু
দুর্নীতিতে জড়িতদের বিচার হওয়া জরুরি
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
অবশেষে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জালে আটকে গেছেন বেসিক ব্যাংকে ভয়াবহ ঋণ কেলেঙ্কারির মূল হোতা আবদুল হাই বাচ্চু।
প্রতিষ্ঠানটির একসময়ের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী সাবেক এই চেয়ারম্যানকে অভিযুক্ত করে একযোগে ৫৯ মামলার চার্জশিট দিয়েছে দুদক। অবশ্য তিনি একাই নন, মামলা দায়েরের আট বছর পর বাচ্চুসহ ১৪৭ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে চার্জশিটে।
আসামিদের বিরুদ্ধে ২ হাজার ২৬৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। চার্জশিটে নাম যুক্ত হওয়ায় আইন অনুযায়ী বাচ্চুকে গ্রেফতারে আর কোনো বাধা রইল না। দুদক ছাড়াও আদালতের নির্দেশে পুলিশও তাকে গ্রেফতার করতে পারবে। যদিও তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো তথ্য এখনো কারও জানা নেই। তবে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে তিনি বিশাল খামারবাড়ি গড়ে তুলেছেন বলে শোনা যায়।
আবদুল হাই বাচ্চু ২০০৯ সালে সরকারি মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই অনিয়মের জালে আটকে যায় ব্যাংকটি। জানা যায়, জাল দলিল, একজনের জমির দলিল দিয়ে অন্যজনকে হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার মৌখিক নির্দেশ, নিয়ম ভঙ্গ করে স্বামী ও স্ত্রীকে পৃথকভাবে ঋণ দেওয়ার নজির স্থাপন করেছিলেন তিনি। কম দামি জমির মূল্য ৩৫ থেকে ৪০ গুণ বেশি দেখিয়ে মোটা অঙ্কের ঋণ ছাড় করার মতো অনৈতিক কাজ করতেও পিছপা হয়নি বাচ্চুর নেতৃত্বাধীন পরিচালনা পর্ষদ। কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এবং দুদকের তদন্তে বেসিক ব্যাংকের এসব অনিয়ম ও ঋণ জালিয়াতির চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। বাচ্চুসহ পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করে দুদক। যদিও গোড়ার দিকে এসব অভিযোগের সঙ্গে বাচ্চুর সম্পৃক্ততা মিলছে না বলে দুদক কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন।
দুঃখজনক হলেও সত্য, দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে প্রায়ই ঋণ জালিয়াতির ঘটনা ঘটলেও এর লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। অব্যবস্থা ও দুর্বল আইনের কারণে প্রতিবছর ব্যাংক খাত থেকে ঋণের মাধ্যমে হাজার কোটি টাকা লুট হচ্ছে এবং এর সিংহভাগই পাচার হচ্ছে বিদেশে। দেখা গেছে, অনিয়ম বা জালিয়াতির মাধ্যমে বিতরণকৃত ঋণের অধিকাংশই কুঋণ বা খেলাপি ঋণে পর্যবসিত হয়।
অর্থনীতিবিদরা অনেকদিন ধরেই বলে আসছেন, দেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় সমস্যা খেলাপি ঋণ। এটা কমাতে না পারলে আমাদের অর্থনীতি টেকসই হবে না। এ অবস্থায় দেশের ব্যাংক খাত সংস্কারের দিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি। এ খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। শুধু বেসিক ব্যাংক নয়, অন্যান্য ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতিতে জড়িতদের এবং ঋণখেলাপিদেরও বিচারের আওতায় আনা উচিত। দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে উদাহরণ তৈরি করতে হবে। একইসঙ্গে রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালক নিয়োগের সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। উদ্বেগের বিষয় হলো, ব্যাংক খাতে এখন পর্যন্ত জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা যায়নি। মনে রাখতে হবে, ব্যাংক ও আর্থিক খাত দেশের উন্নয়নের প্রধান চালিকাশক্তি। দুর্ভাগ্যজনক হলো, অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনার চেয়ে ছাড় দেওয়ার মানসিকতাই দেখা যায় বেশি। এ প্রবণতা পরিহার করা না হলে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো কঠিন হয়ে পড়বে।