Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

মাদক খাতে অর্থ পাচার: জড়িতদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মাদক খাতে অর্থ পাচার: জড়িতদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে

দেশে মাদকের বিস্তার কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, তা উঠে এসেছে ইউনাইটেড নেশনস করফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আঙ্কটাড) অবৈধ অর্থপ্রবাহ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে মাদকের কারণে প্রতিবছর প্রায় ৫ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা পাচার হয়। মাদক চোরাকারবার থেকে অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এশিয়ায় শীর্ষে এবং বিশ্বে পঞ্চম স্থানে রয়েছে। মাদকের অবৈধ অর্থপ্রবাহের দিক থেকে বিশ্বে যে চারটি দেশ বাংলাদেশের উপরে রয়েছে সেগুলো হলো-মেক্সিকো, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর ও পেরু। এ চারটি দেশই মাদকের সাম্রাজ্য বলে পরিচিত সুদূর লাতিন আমেরিকার। সেদিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশে মাদক চোরাকারবারের এ চিত্র অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বস্তুত এক্ষেত্রে একইসঙ্গে দুটি বড় অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে-একটি মাদক চোরাকারবার, অন্যটি অর্থ পাচার। আঙ্কটাডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইয়াবা, হেরোইনসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক বাংলাদেশে ঢুকছে। আর মাদক কেনার অর্থ বাংলাদেশ থেকে পাচার হচ্ছে। বস্তুত দেশ থেকে অর্থ পাচার হচ্ছে নানাভাবেই। অর্থ পাচার রোধে নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। কিন্তু এর কোনোটিতেই সুফল মেলেনি। সেক্ষেত্রে মাদক চোরাকারবার রোধে কঠোর হলে দুই ক্ষেত্রেই সুফল মিলতে পারে।

মাদক অর্থনীতি দেশের সামাজিক-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে যে ক্ষতি করছে, তার প্রভাব সুদূরপ্রসারী ও সুগভীর। মাদকাসক্তরা নানা অপরাধে লিপ্ত হচ্ছে। তারা খুন-ছিনতাই, চুরি-ডাকাতি, ধর্ষণ ও অপহরণের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। মাঝেমধ্যে ঐশীর মতো ব্যতিক্রমী ঘটনা আমাদের আলোড়িত করে টনক নড়িয়ে দিচ্ছে বটে; কিন্তু সেটা যেন বুদ্বুদ বলে প্রতিভাত হয়। মাদক ব্যবসা ও মাদকের শিকড় এমন আষ্টেপৃষ্ঠে বিস্তৃত যে তা প্রায় দুরারোগ্য ক্যানসারের মতো ছড়িয়ে যাচ্ছে। সমাজে নিত্যনতুন নেশাদ্রব্যের আবির্ভাব ঘটছে। আইস, এমডিএমএ, এলএসডি, ইয়াবা, সিসা, ফেনসিডিল, গাঁজা, হেরোইন, কোকেন ইত্যাদি একটির সঙ্গে আরেকটি পাল্লা দিয়ে বিস্তার লাভ করছে।

প্রশ্ন হলো, দেশে মাদকের প্রবেশ রোধ করা যাচ্ছে না কেন? ২০১৮ সালে সারা দেশে মাদকের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযানে নেমেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বলা হয়েছিল, মাদকের বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। সে সময় বহু গ্রেফতারের ঘটনা ঘটে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে বেশ কয়েকজন নিহত হওয়ার খবরও পাওয়া যায়। কিন্তু মাদক চোরাকারবার বা মাদকের বিস্তার বন্ধ হয়নি। এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হলো এ ব্যবসায় অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির জড়িত থাকা। অভিযোগ আছে, মাদক ব্যবসায়ীরা রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থেকে নানা অপরাধ চালিয়ে যায় নির্বিঘ্নে। এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্যের বিরুদ্ধেও মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগসাজশ থাকার অভিযোগ আছে। মাদকের বিস্তার রোধ করতে হলে এসব জায়গায় দৃষ্টি দেওয়া জরুরি। দেশের সীমান্ত এলাকায় কঠোর নজরদারির পাশাপাশি সব অবৈধ মাদক আমদানিকারককে, তারা যত প্রভাবশালীই হোক, শনাক্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। মাদক ব্যবসায়ীদের অর্থের লেনদেনের তথ্যও উদঘাটন করতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাদকের অর্থ লেনদেন হয় হুণ্ডির মাধ্যমে। সেক্ষেত্রে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করার সুযোগ রয়েছে। তবে শুধু মামলা করাই যথেষ্ট নয়, মাদক অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করাটাই বড় বিষয়। এজন্য যথাযথ চার্জশিট প্রদান ও পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ প্রয়োজন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম