লিবিয়ায় বাংলাদেশির মৃত্যু, অভিবাসন প্রক্রিয়ায় সুষ্ঠু পরিকল্পনা জরুরি
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
লিবিয়ায় পাচার হওয়া ফরিদপুরের সালথা উপজেলার মাঝারদিয়া গ্রামের নুর আলম নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনাটি হৃদয়বিদারক।
উন্নত জীবনের আশায় ইউরোপে যাওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। এ লক্ষ্যে বছরখানেক আগে দালালচক্রের সঙ্গে ৮ লাখ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হন তিনি। টাকা নেওয়ার পর দালালচক্রের এদেশীয় এজেন্টরা তাকে লিবিয়ায় পাঠায়। সেখানে একটি বাড়িতে আটকে রেখে আরও টাকার জন্য নির্যাতন চালায়। এর ভিডিও দেখিয়ে পরিবারের কাছ থেকে কয়েক দফায় ২২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হলেও দেশে ফিরে মামলা করতে পারে এমন আশঙ্কায় শেষ পর্যন্ত নুরকে হত্যা করে পাচারকারী চক্র।
সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারী চক্রের প্ররোচনায় মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে অবৈধ পথে পাড়ি জমাতে গিয়ে এভাবে অনেক বাংলাদেশি নিজেদের বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন। এ ধরনের পাচারকারীদের ব্যাপারে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে; কোনোরকম ছাড় দেওয়া চলবে না। পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সচেতন করতে হবে, যাতে তারা প্রলোভন ও মিথ্যা আশ্বাসে অবৈধ কোনো প্রক্রিয়ায় কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে বিদেশে পাড়ি না জমান। মানব পাচারের মতো অপরাধ রোধে সরকারের কার্যকর উদ্যোগ যেমন প্রয়োজন, তেমনি বিদেশ গমনেচ্ছুদেরও সতর্ক ও সচেতন হওয়া জরুরি।
দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসী আয়ের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে পুরো অভিবাসন প্রক্রিয়া সুষ্ঠু পরিকল্পনার আওতায় আনা প্রয়োজন। জনশক্তি রফতানি খাতে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা দূর করা গেলে অবৈধ পন্থায় বিদেশ গমনের প্রবণতা যেমন হ্রাস পাবে, তেমনি রেমিট্যান্স প্রবাহেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে অন্তত ১০ লাখ মানুষ বিদেশ যান, যাদের মধ্যে অনেকেই পাচারকারীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়ে জোরপূর্বক শ্রম, যৌন শোষণ, ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়েসহ আধুনিক দাসত্বের শিকার হচ্ছেন। এ অবস্থায় উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যথাযথ পদক্ষেপ জরুরি। তবে মানব পাচার যেহেতু আন্তঃদেশীয় সমস্যা এবং কোনো দেশের একার পক্ষে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়, তাই এ ব্যাপারে জনশক্তি রফতানিকারক, ট্রানজিট এবং জনশক্তি গ্রহণকারী দেশগুলোর একযোগে কাজ করার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসা উচিত।