বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের ছুটি-প্রবণতা: ভারসাম্য বজায় রাখতে কঠোর পদক্ষেপ নিন
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দেশের ৪৭ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের বড় একটি অংশ ছুটিতে থাকার বিষয়টি অগ্রহণযোগ্য। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষক রয়েছেন ১৫ হাজার ৫ জন। তাদের মধ্যে ৩ হাজার ৫২৮ জন অন্তত ৫ ধরনের ছুটিতে রয়েছেন, যা মোট শিক্ষকের ২৩ শতাংশেরও বেশি। এছাড়া এসব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন চাকরির প্রবণতাও রয়েছে।
এছাড়া কারও কারও বিরুদ্ধে এনজিও ব্যবসা, বিদেশি সংস্থায় পরামর্শকসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে খণ্ডকালীন কাজ করার অভিযোগও রয়েছে। উদ্বেগজনক হলো, এ পরিস্থিতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান শিক্ষক সংকট; বিশেষ করে ঢাকার বাইরে অপেক্ষাকৃত নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনিয়র শিক্ষকের বেশি অভাব রয়েছে। এক্ষেত্রে বিজ্ঞপ্তি দিয়েও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক পাচ্ছে না; আবার কোথাও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরে নিয়োগ করা হচ্ছে না শিক্ষক।
এ অবস্থায় জুনিয়র শিক্ষক কিংবা ‘যা আছে তা দিয়ে’ই চলছে সেখানকার লেখাপড়া। বস্তুত ছুটি, পদশূন্যতা ও প্রতিষ্ঠানের বাইরে বিভিন্ন কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জড়িয়ে পড়ায় ছাত্রছাত্রীরা গুণগত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন; উপরন্তু গবেষণা কার্যক্রমও বিঘ্নিত হচ্ছে, যা মোটেই কাম্য নয়।
জ্ঞান সৃষ্টি ও নতুন জগতের সঙ্গে পরিচিত হতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের উচ্চতর শিক্ষা কিংবা দেশ-বিদেশে সেমিনার, সম্মেলন বা গবেষণা প্রবন্ধ পাঠ করতে যাওয়া অপরিহার্য এবং এজন্য তারা ছুটিতে যেতেই পারেন। তবে পিএইচডির মতো দীর্ঘ ছুটিতে কেউ গেলে এর বিপরীতে শিক্ষক নিয়োগের বিধানও রয়েছে। সুতরাং এ ধরনের ছুটি একাডেমিক কার্যক্রমে তেমন প্রভাব ফেলার কথা নয়।
কিন্তু সমস্যা হয় তখনই, যখন কোনো বিভাগে একই বছরে একাধিক শিক্ষক ছুটিতে যান। এছাড়া মাঝেমধ্যেই শোনা যায়-উচ্চতর শিক্ষা শেষে অনেকেই দেশে ফিরছেন না; এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখার প্রয়োজনও মনে করছেন না। এ ধরনের প্রবণতা অনাকাঙ্ক্ষিত তো বটেই, একইসঙ্গে অন্যায় ও ন্যক্কারজনক বলেও মনে করি আমরা।
একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সুনাম ও মর্যাদা ছিল, যা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছিল। দুঃখজনক হলো, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অতীত গৌরব ও ঐতিহ্যের কোনোকিছুই আমরা ধরে রাখতে পারিনি। এর কারণ সম্ভবত অতীতে যেসব মহৎপ্রাণ মানুষ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত হতেন, তারা পাঠদান ও শিক্ষাসংশ্লিষ্ট গবেষণার বাইরে অন্যকিছু করার কথা চিন্তাও করতেন না।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থেকে শুরু করে অধিকাংশ শিক্ষকের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় দলীয় বিবেচনায়। এ কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়মের কথা মাঝেমধ্যেই শোনা যায়। বলার অপেক্ষা রাখে না, এসব ঘটনা সার্বিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পিছিয়ে দিচ্ছে। এ কারণে বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থার র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্থান পাচ্ছে না।
শিক্ষকদের ঢালাও ছুটি-প্রবণতার কারণে যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটছে, এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণের অবকাশ নেই। দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই নেতিবাচক প্রবণতা রোধে শিক্ষকদের ছুটি দেওয়ার ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে, এটাই প্রত্যাশা।