নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব
রোহিঙ্গা সংকটের আশু সমাধান কাম্য
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
গত ২১ ডিসেম্বর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমারের পরিস্থিতি সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদিত হওয়ার পর রোহিঙ্গা সংকটের প্রতি পশ্চিমাদের মনোযোগ বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
উল্লেখ্য, গত সাত দশকে নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমার সংক্রান্ত এটিই প্রথম প্রস্তাব। রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে ২০০৭ সালে একটি প্রস্তাবে বেইজিং ও মস্কো ভেটো প্রয়োগ করায় তা অনুমোদিত হয়নি।
এরপর ২০১৮ সালেও নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব গ্রহণের চেষ্টা চলেছে; কিন্তু ওই উদ্যোগও সফল হয়নি। বলা প্রয়োজন, ১৫ সদস্যবিশিষ্ট নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ানমারের প্রশ্নে বরাবরই বিভক্ত থেকেছে।
বিশ্ব পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হচ্ছে। কোভিড মহামারি, ইউক্রেন যুদ্ধ, এমনকি জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব সর্বত্র দৃশ্যমান। এসবের ডামাডোলে রোহিঙ্গা সংকটের ওপর থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর হারানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল বলা চলে। তবে নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব অনুমোদন এক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করেছে বলে মনে করি আমরা। অবশ্য চ্যালেঞ্জও রয়েছে অনেক। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে রোহিঙ্গা ইস্যুর প্রতি পশ্চিমাদের মনোযোগ কিভাবে ধরে রাখা যায়, সে ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মূলত নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের আলোকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি ‘ফলোআপ’ হিসাবে বাংলাদেশকে আরও বেশি ভূমিকা পালন করতে হবে; যেমন-বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে এ বিষয়ে আলোকপাত ও আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারকাজ চলাকালে নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তবে এটাকে বড় প্রাপ্তি মনে করে নিষ্ক্রিয় থাকলে চলবে না। আরও নতুন নতুন প্রস্তাব পেশের ব্যাপারে আমাদের উদ্যোগী হতে হবে। একইসঙ্গে নিউইয়র্ক ও জেনেভায় বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনকে আন্তর্জাতিক অংশীদার ও নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার ও অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযান শুরু হলে সেখানকার সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠীর সাত লাখেরও বেশি মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এর আগে কয়েক দশকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করেছে আরও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের কারণে আমাদের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় আর্থ-সামাজিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাÍক অবনতি ঘটছে। অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিদেশ গিয়ে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে এবং এর দায়ভার বর্তাচ্ছে বাংলাদেশের ওপর। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার বাসস্থান ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। সরকার ইতোমধ্যে রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তর করেছে, যেখানে উন্নত বাসস্থান ও যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ স্ব-কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে আমরা মনে করি, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের মধ্যেই যাবতীয় সমস্যার সমাধান নিহিত রয়েছে। এ লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যাতে গঠনমূলক একটি প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়ে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে, সেজন্য সরকার তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে, এটাই প্রত্যশা।