Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

পাসপোর্ট অফিসে অব্যাহত দুর্নীতি: নিয়মিত তদারকি প্রয়োজন

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পাসপোর্ট অফিসে অব্যাহত দুর্নীতি: নিয়মিত তদারকি প্রয়োজন

পাসপোর্ট অফিসে ঘুস-দুর্নীতির যেন শেষ নেই। দুর্নীতি রোধে মাঝে মাঝে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা শোনা গেলেও কিছুদিন পরই দেখা যায় সবকিছু চলছে আগের মতোই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ একদিকে কড়াকড়ি করলে আরেকদিকে খুলে দেওয়া হয় দুর্নীতির নতুন পথ। বিশেষ করে পাসপোর্ট অধিদফতরের আঞ্চলিক অফিসগুলো যেন দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এসব অফিসে অলিখিতভাবে দালাল নিয়োগ দিয়ে প্রকাশ্যে চলে ঘুসের কারবার। অধিকাংশ পাসপোর্ট অফিসে কথিত ‘চ্যানেল মাস্টারে’র মাধ্যমে প্রতিদিন ঘুস তোলা হয়। সব মিলে এর পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা! জানা যায়, এক কুমিল্লা পাসপোর্ট অফিসেই দিনে ঘুস ওঠে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা। এ তথ্য উঠে এসেছে যুগান্তরের অনুসন্ধানে। প্রশ্ন হলো, পাসপোর্ট অফিসে দুর্নীতি বন্ধ হচ্ছে না কেন? ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে সদিচ্ছা থাকলে তো এমনটি হওয়ার কথা নয়।

পাসপোর্ট খাত দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত সেবা খাতগুলোর অন্যতম। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) খানা জরিপ ২০২১ অনুযায়ী, ওই বছর দুর্নীতিগ্রস্ত খাতগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে (৭০.৫ শতাংশ) ছিল এ খাত। এখনো এ খাতে ঘুস বাণিজ্য ও হয়রানি চলছে অব্যাহতভাবে। যুগান্তরের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এ সংক্রান্ত নানা তথ্য। শুধু নতুন পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রেই নয়, সরকার ই-পাসপোর্ট চালু করার পর সুযোগসন্ধানীরা মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) নবায়নের নামেও রমরমা ঘুস বাণিজ্যে মেতে উঠেছে। বিশেষ করে জাতীয় পরিচয়পত্রে তথ্যগত জটিলতার কারণে যারা ই-পাসপোর্ট করাতে পারছেন না, তারাই হচ্ছেন এর শিকার। ই-পাসপোর্ট এড়িয়ে মোটা অঙ্কের ঘুসের বিনিময়ে তারা নবায়ন করিয়ে নিচ্ছেন পুরোনো পাসপোর্ট। জানা গেছে, ক্ষেত্রবিশেষে এই ঘুসের পরিমাণ হয়ে থাকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। উদ্বেগের বিষয় হলো, যেসব অপরাধী ও রোহিঙ্গা জাল-জালিয়াতি করে জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়াই ভুয়া জন্মনিবন্ধন দিয়ে এমআরপি করিয়েছিল, তারাও এখন ঘুসের বিনিময়ে এমআরপি নবায়ন করিয়ে নিচ্ছে। তাছাড়া বিদেশে আত্মগোপনে থাকা প্রভাবশালী রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীরাও ঢাকা থেকে এমআরপি নবায়ন করিয়ে নিচ্ছেন বলে ইতঃপূর্বে খবর বেরিয়েছে।

হয়রানি ও দুর্নীতিমুক্ত সেবা পাওয়া জনগণের সাংবিধানিক অধিকার। অথচ বাস্তবতা হলো, দেশে ঘুস ছাড়া কোনো সেবা পাওয়া যায় না বললেই চলে। পাসপোর্ট অধিদফতরের আঞ্চলিক অফিসসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের লাগামহীন দুর্নীতি সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার খর্ব করছে এবং এর ফলে প্রান্তিক ও পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা দেখছি, দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক অবদান রাখার পরও প্রবাসী শ্রমিকরা পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে গিয়ে নানাভাবে দুর্ভোগ ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অথচ পাসপোর্ট অফিসের দুর্নীতিবাজদের কারণে একশ্রেণির মানুষ ঘুস দিয়ে অবৈধভাবে সেবা নিচ্ছেন। এ অবস্থা চলতে পারে না। সাধারণ মানুষ যাতে হয়রানি, ভোগান্তি ও দুর্নীতিমুক্তভাবে পাসপোর্ট পেতে পারে, সে জন্য প্রতিটি পাসপোর্ট অফিসে অভিযান পরিচালনা এবং নিয়মিত তদারকি প্রয়োজন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম