মিশেল ব্যাচেলেটের আহ্বান, মানবাধিকার ইস্যুতে কমিশন গঠন জরুরি
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০২২, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বুধবার বাংলাদেশ সফর শেষে ফিরে যাওয়ার আগে জাতিসংঘ মানবাধিকার সংক্রান্ত হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন।
এ সংবাদ সম্মেলনে তিনি মানবাধিকারসংক্রান্ত এমন কিছু কথা বলেছেন, যা তাৎপর্য বহন করে। প্রথমত, তিনি বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন-গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা অভিযোগ তদন্তে একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করা প্রয়োজন।
এ কমিশনের প্রধান কে হবেন, তা উল্লেখ না করে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই। তিনি বলেন, একেক দেশে একেকভাবে এ কমিশন গঠন করা হয়। কোথাও বিচার বিভাগীয় কেউ, আবার কোথাও স্বাধীন কোনো ব্যক্তি কমিশনপ্রধান হয়ে থাকেন। তবে কমিশনপ্রধানকে অবশ্যই সমাজে বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে, তার থাকতে হবে সুনির্দিষ্ট ম্যান্ডেট।
মিশেল ব্যাচেলেট আরও বলেন, বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ শুধু দেশি-বিদেশি বিভিন্ন অধিকার গ্রুপই উত্থাপন করেছে এমন নয়, বরং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও বলেছে যে, নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যুর অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগ অস্বীকার না করে বরং স্বাধীন ও বিশ্বাসযোগ্য কমিশনের মাধ্যমে তদন্ত করা যেতে পারে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত হাইকমিশনার উপরের যেসব কথা বলেছেন, সেগুলোর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করার সুযোগ নেই। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি ভালো নয়। গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বহুল আলোচিত দুটি বিষয়। গুমের কথা উঠলে বিএনপির ইলিয়াস আলী ও চৌধুরী আলমের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। অনেক বছর অতিক্রান্ত হলেও তাদের খোঁজ এখনো মেলেনি। ওদিকে কক্সবাজারের কাউন্সিলর একরামুলের ‘ক্রসফায়ারের’ ঘটনাটিও দেশে বহুল আলোচিত। ওই মৃত্যুর ব্যাপারে মামলা পর্যন্ত হয়নি। তবে এটাও ঠিক, এমন অনেক প্রমাণ পাওয়া গেছে, যেখানে গুম হওয়া ব্যক্তি স্বেচ্ছায় আত্মগোপন করেছিলেন এবং পরে ফিরে এসেছেন।
আমরা মনে করি, স্বাধীন কমিশনের মাধ্যমে গুম-খুনের ঘটনাগুলোর বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত হলে প্রতিটি ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটিত হবে এবং যেসব ক্ষেত্রে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, সেসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে। এটা বলতেই হবে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ রয়েছে বর্তমানে। গুমের অভিযোগও এখন আর পাওয়া যাচ্ছে না। অর্থাৎ পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলা যায়।
এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে অবশ্যই। মিশেলের কথার সঙ্গে আমরা একমত; তিনি বলেছেন, একটি দেশের উন্নতি বলতে শুধু জিডিপির হারই বোঝায় না, দেশটিতে মানবাধিকার পরিস্থিতি কেমন, সেটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই বিরোধী দল কিংবা জাতিসংঘ দাবি করছে বলেই নয়, নিজস্ব তাগিদেই সরকারকে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ তদন্তে একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করতে হবে। এটা সরকারের পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির জন্যই প্রয়োজন।
মিশেল ব্যাচেলেট আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সুশীল সমাজের জন্য স্পেস সৃষ্টি, মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের প্রয়োজনীয়তা জরুরি বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, জাতীয় সংলাপের মাধ্যমে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধান করা হলে পরস্পরের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক তৈরি হবে। তার এই কথাগুলোকেও আমরা গুরুত্ব দিতে চাই। আমরা চাই, আগামী সাধারণ নির্বাচন এমন পরিবেশে অনুষ্ঠিত হোক, যাতে শুধু দেশের জনগণ নয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও তা গ্রহণযোগ্য হয়।