Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

সংকটে শিল্প খাত

সরকারের সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা জরুরি

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২২, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সংকটে শিল্প খাত

দেশের শিল্প খাতে বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হওয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক। বিদ্যমান বৈশ্বিক ও দেশীয় পরিস্থিতি এবং ডলারের দামের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির কারণে একদিকে শিল্পের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানির খরচ বেড়েছে; অন্যদিকে লোডশেডিংয়ের কারণে নিজস্ব জেনারেটরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করায় পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়লেও ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় কমেছে বিক্রি। উপরন্তু মাত্র নয় মাসের মাথায় দ্বিতীয় দফায় জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় এ খাতে সংকট আরও তীব্র হয়েছে। এ অবস্থায় আগামী দিনে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে শিল্প খাতের জন্য ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দেবে, তা বলাই বাহুল্য। বস্তুত জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যেই পড়তে শুরু করেছে। শিল্প মালিক ও ব্যবসায়ীদের মতে, আগামী এক মাসের মধ্যে এর নেতিবাচক প্রভাব আরও প্রকট হবে। দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, শিল্প খাতে উৎপাদন খরচ যেভাবে বেড়েছে, অনুরূপভাবে পণ্যের দাম বাড়ানো যাচ্ছে না। এ কারণে লোকসানে পড়তে হচ্ছে উদ্যোক্তাদের। রপ্তানিমুখী শিল্পে এ সংকট আরও প্রকট। বলা চলে, রপ্তানি খাত এখন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এ সংকট দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে না পারলে ভবিষ্যতে সংকট আরও বাড়বে, যা মোটেই কাম্য নয়।

জানা যায়, রপ্তানি খাতে আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলো বিদ্যমান সংকট ভিন্নভাবে মোকাবিলা করায় তারা রপ্তানি বাজারে এগিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে আমাদের দেশে যদি অব্যাহত লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি জ্বালানি তেল ও গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলার উদ্যোগ নেওয়া হয়, তাহলে সংগত কারণেই উৎপাদন কমবে ও খরচ বাড়বে। কিন্তু বাড়তি দামে যদি পণ্য বিক্রি করা না যায়, তাহলে এ খাত গভীর সংকটে নিমজ্জিত হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এ বাস্তবতায় সরকারের উচিত এসব বিষয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

দেশে দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগ পরিস্থিতি ভালো নয়। গ্যাস-বিদ্যুৎ পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি না হওয়ায় অনেক উদ্যোক্তা বিনিয়োগ করেও উৎপাদনে আসতে পারছেন না। নতুন বিনিয়োগেও আগ্রহী হচ্ছেন না উদ্যোক্তারা। করোনাভাইরাসের প্রকোপ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিকে যেমন সংকটে নিমজ্জিত করেছে, একইভাবে দেশের অর্থনীতিও নেতিবাচক পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে। লন্ডনভিত্তিক সাময়িকী দি ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিট করোনাভাইরাস মহামারির প্রভাবে দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশেই ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতির কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও বিপর্যয় নেমে আসার পূর্বাভাস দিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে এর সঙ্গে যোগ হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি। সব মিলে দেশের শিল্প খাতে স্থবিরতা সৃষ্টির আলামত স্পষ্ট হতে শুরু করেছে, যা নিয়ে দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারা গভীরভাবে চিন্তিত। এ কথা সত্য, অতীতে আমাদের অর্থনীতি নানামুখী প্রাকৃতিক ও রাজনৈতিক দুর্যোগ অতিক্রম করে এগিয়েছে। দেশের পরিশ্রমী মানুষ বেঁচে থাকার তাগিদে কঠোর পরিশ্রম করে অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছেন। আশা করা যায়, সরকারের সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এবারও সব ধরনের প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবেন তারা। উদ্ভূত সমস্যা মোকাবিলার লক্ষ্যে সরকার শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়াবে, এটাই প্রত্যাশা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম