জনশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদন
চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ত্রুটিগুলো শুধরে নিতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২২, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এর প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।
এ প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬, যা ১১ বছর আগে ২০১১ সালের হিসাবে ছিল ১৪ কোটি ৪০ লাখ ৪৩ হাজার ৬৯৭। অর্থাৎ গত এক দশকে দেশে মানুষ বেড়েছে ২ কোটি ১১ লাখ ১৪ হাজার ৯১৯ জন। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.২২ শতাংশ, যা আগে ছিল ১.৪৬ শতাংশ। এ থেকে বোঝা যায় দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমেছে।
শুমারিতে উঠে আসা আরও কিছু উল্লেখযোগ্য তথ্য হলো-দেশে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি; সাক্ষরতার হার বেড়েছে-আগের শুমারিতে যা ছিল ৫১.৭৭ শতাংশ, এবারের শুমারিতে তা হয়েছে ৭৪.৬৬ শতাংশ; মুসলমান জনসংখ্যার হার বেড়েছে এবং হিন্দু জনসংখ্যার হার কমেছে; গ্রামে ১১ কোটি ৩০ লাখ ৬৩ হাজার ৫৮৭ জন এবং শহরে ৫ কোটি ২০ লাখ ৯ হাজার ৭২ জন বসবাস করে; রাজধানী ঢাকায় বাস করে ১ কোটি ২ লাখ ৭৮ হাজার ৮৮২ জন; বাসগৃহের সংখ্যা ৩ কোটি ৫৯ লাখ ৯০ হাজার ৯৫১; মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর হার ৫৫.৮৯ শতাংশ।
এসব তথ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ এর ভিত্তিতে দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। তাছাড়া দেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির একটি আভাসও পাওয়া যায় এ থেকে।
দেশে জনসংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে খাদ্য, বাসস্থান এবং জীবনযাপনের অন্যান্য উপকরণের চাহিদা। সরকারকে সে অনুযায়ী খাদ্য উৎপাদন, আমদানি তথা সংগ্রহের ব্যবস্থা করতে হয়। এজন্য জনসংখ্যা সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেতে জনশুমারির নির্ভুল গণনার বিকল্প নেই। এবার জনশুমারি ও গৃহগণনার পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়েছে ডিজিটাল পদ্ধতিতে। এ কারণে মাত্র এক মাসের মধ্যে সব তথ্য প্রকাশ করতে পেরেছে বিবিএস। তবে শুমারির তথ্য সংগ্রহের সময় নির্ধারণ ও পদ্ধতিতে কিছু ত্রুটির কথা বলেছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। যেমন, তারা মনে করেন, শুমারি বর্ষাকালে করা ঠিক হয়নি। শুমারি চলাকালে সিলেট ও উত্তরাঞ্চল ছিল বন্যাকবলিত। ফলে ওইসব এলাকার কতসংখ্যক মানুষ গণনার আওতায় এসেছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এছাড়া অনেকেই বলেছেন, তাদের বাসায় শুমারির তথ্য সংগ্রহকারীরা যখন এসেছিলেন, তখন তারা বাসায় না থাকায় গণনার আওতার বাইরে থেকে গেছেন; পরে আর তাদের গণনায় ধরা হয়নি। আবার কোনো কোনো বাসায় তথ্য সংগ্রহকারীরা যাননি বলেও অভিযোগ আছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে কতসংখ্যক মানুষ গণনা থেকে বাদ পড়েছেন, তা নির্ভুল ও নিরপেক্ষভাবে নিরূপণ করে জনশুমারির পূর্ণাঙ্গ বা চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করা উচিত।
দেশের জনসংখ্যা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, প্রজনন, বিপণন, শ্রমশক্তি, উৎপাদন এবং প্রশাসনের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের লক্ষ্যে ১০ বছর অন্তর এ শুমারি পরিচালিত হয়। আগে এ শুমারিকে বলা হতো আদমশুমারি।
২০১৩ সালের পরিসংখ্যান আইন অনুযায়ী এবার এর নামকরণ করা হয়েছে জনশুমারি। দেশে সর্বশেষ এ শুমারি হয়েছিল ২০১১ সালে। সে অনুযায়ী ২০২১ সালে জনশুমারি হওয়ার কথা থাকলেও করোনা মহামারি এবং ট্যাব ক্রয়সংক্রান্ত জটিলতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। আগামীতে যথাযথ নিয়মমাফিক জনশুমারি পরিচালিত হবে, এটাই কাম্য।