Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

উন্নয়ন প্রকল্পে বিলাসী ব্যয়

বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে হিসাবি হতে হবে

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২২, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

উন্নয়ন প্রকল্পে বিলাসী ব্যয়

‘সরকারি কর্মচারী হাসপাতালকে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে উন্নীতকরণ’ শীর্ষক অনুমোদিত মূল প্রকল্পে চিকিৎসক, নার্স ও প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ৩২ জনের বিদেশ সফরের ব্যবস্থা থাকলেও প্রথম সংশোধনীতে তা ৪২ জন করার সংবাদ পাওয়া গেছে। এ কারণে এ বাবদ ব্যয়ের পরিমাণও বেড়েছে, যা অনভিপ্রেত। অবশ্য কেবল এই একটি খাতেই নয়; সংশোধনী প্রস্তাবে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যয়ের পরিধিও বাড়ানো হয়েছে, যার যৌক্তিকতা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করার পর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মনে করি আমরা। উল্লেখ্য, রাজধানীর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত ফুলবাড়িয়া এলাকায় বাস্তবায়িত ‘সরকারি কর্মচারী হাসপাতালকে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে উন্নীতকরণ’ প্রকল্পের মূল ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৭৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। প্রকল্পটি ২০১৯ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও পরবর্তী সময়ে ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে এর মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। বর্তমানে প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করার প্রস্তাব দেওয়ার পাশাপাশি মোট ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৪২৯ কোটি টাকা। অপ্রিয় হলেও সত্য, উন্নয়ন প্রকল্পের নামে বিদেশ সফরের জন্য উন্মুখ থাকেন একশ্রেণির কর্মকর্তা। এ লক্ষ্যে প্রকল্প প্রস্তাব প্রস্তুত করার সময় প্রথমেই এ দিকটায় নজর দেওয়া হয়। প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও ‘যেনতেন’ বিষয়ে বিদেশ সফরের এ প্রবণতা থেকে অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে এবং এ ধরনের ব্যয় প্রস্তাবনার বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনকে আরও বেশি কঠোর হতে হবে। ইতঃপূর্বে ‘পুকুর ও খাল উন্নয়ন’বিষয়ক প্রশিক্ষণ ছাড়াও ঘাসচাষ ও ঘাসকাটা শিখতে কর্মকর্তাদের বিদেশ যাওয়ার ছক সাজানোর কথা গণমাধ্যমে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে সেসময় জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়াও লক্ষ করা গেছে। কাজেই প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি কাম্য নয়।

কোভিড-১৯ ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সরকারি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন সংকটের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসী ব্যয় সংকোচনের পথে হাঁটছে সরকার। অথচ দেখা যাচ্ছে, একশ্রেণির সুবিধাভোগী কর্মকর্তা সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে প্রকল্প বাস্তবায়নের আড়ালে নিজস্ব ‘ধান্ধা’ হাসিলের তালে রয়েছেন, যা শক্তহাতে রোধ করা প্রয়োজন। বস্তুত বৈশ্বিক মন্দার মধ্যে কোনো প্রকল্পে অপ্রয়োজনীয় খাতে অর্থ বরাদ্দ মোটেই কাঙ্ক্ষিত নয়। এছাড়া প্রকল্পের সময় বৃদ্ধির প্রস্তাবও বাস্তবসম্মত নয়। কেননা, এতে সরকারের সময় ও অর্থব্যয় হলেও কাঙ্ক্ষিত ফল লাভ সম্ভব হয় না। সবচেয়ে বড় কথা-নির্ধারিত সময়ে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন করা না গেলে সাধারণ মানুষ এর সুফল থেকে বঞ্চিত হয়, যা মোটেই কাম্য নয়। প্রকল্পে বারবার সংশোধনী আনা হলে অতিরিক্ত ব্যয় নির্ধারণের মাধ্যমে অর্থ পকেটস্থ করার সুযোগ তৈরি হয়। এতে দুর্নীতির প্রসার ঘটে। কাজেই প্রকল্প কতটা সুন্দর, তা দেখার আগে দেখতে হবে বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এটি প্রণয়ন করা হয়েছে কি না এবং তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব কি না। এক্ষেত্রে প্রকল্প অনুমোদনের আগে যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বাস্তবায়নে জবাবদিহির বিষয়টিও নিশ্চিত করা জরুরি। ‘সরকারি কর্মচারী হাসপাতালকে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে উন্নীতকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পে জবাবদিহি নিশ্চিতের মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বন্ধের পাশাপাশি তা দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে-এটাই প্রত্যাশা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম