সড়কে মাত্রাতিরিক্ত প্রাণহানি
এই নৈরাজ্য আর কতদিন চলবে?
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০২২, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে অনেক পদক্ষেপ নেওয়ার পরও দুর্ঘটনার ব্যাপকতা কমছে না। শনিবার সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২ ব্যক্তির প্রাণ গেছে। গতকালও দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। শনিবার ময়মনসিংহের ত্রিশালে ট্রাকচাপায় এক পরিবারের তিনজন নিহত হওয়ার ঘটনাটি মানুষকে বারবার আলোড়িত করবে। কারণ, গাড়িচাপায় সন্তানসম্ভবা এক নারী নিহত হলেও প্রাণে বেঁচে গেছে তার পেটে থাকা সন্তান। গাড়িচাপার পর সন্তানসম্ভবা ওই নারী জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পৃথিবীতে রেখে গেছেন তার নবজাতককে। নবজাতকের হাতেও রয়েছে আঘাতের চিহ্ন। নবজাতকের আঘাতের ঘটনাটি কি চালকদের সচেতন হতে উদ্বুদ্ধ করবে? এছাড়া শনিবার সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় আরও ২৯ ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন। এ তথ্য থেকেই স্পষ্ট, বর্তমানে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা কী ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গতকাল বাবার ট্রলির চাকায় পিষ্ট হয়ে যশোরে প্রাণ গেছে চার বছর বয়সি এক শিশুর। ট্রলি চালক সকালে বাড়ি থেকে ট্রলি নিয়ে বের হওয়ার সময় খেয়ালই করেননি এর পেছনেই রয়েছে তার সন্তান এবং তার ভাইয়ের সন্তান। গাড়ি পেছনে নেওয়ার চেষ্টা করার সময় মুহূর্তে চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা গেছে দুটি শিশু। এ ঘটনা থেকে একজন চালকের উদাসীনতার বিষয়টি আবারও সামনে এলো। সারা দেশের সড়ক-মহাসড়কে চলাচল করা এখন এতটাই বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে যে, একজন যাত্রী নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবেন কি না, তা নিয়ে তাকে প্রতিমুহূর্তে উৎকণ্ঠায় থাকতে হচ্ছে। প্রশ্ন হলো, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে এত ব্যবস্থা গ্রহণের পরও দুর্ঘটনার ব্যাপকতা কমছে না কেন?
২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা বড় ধরনের আন্দোলনে নেমেছিলেন। তখন বলা হয়েছিল, তাদের দাবিগুলো মেনে নেওয়া হবে। কিন্তু গত কয়েক বছরে সড়ক দুর্ঘটনা তো কমেইনি, বরং বলা যায় বেড়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশে সড়ক দুর্ঘটনা এবং এর প্রভাবে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ বছরে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। মহাসড়কে অপরিকল্পিত স্পিড ব্রেকারও দুর্ঘটনার জন্য অনেকাংশে দায়ী। এ ছাড়া ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, সড়কের পাশে হাটবাজার বসা, চালকদের পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাব প্রভৃতি কারণেও দুর্ঘটনা ঘটছে।
সড়ক-মহাসড়কে যান চলাচলের সর্বোচ্চ গতি বেঁধে দিয়ে এবং গতি পরিমাপক যন্ত্র ব্যবহার করে চালকদের ওই নির্দিষ্ট গতি মেনে চলতে বাধ্য করা হলে দুর্ঘটনা অনেক কমে আসতে পারে। চালকদের দক্ষতার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে। সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের কাজটি করতে হবে সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী। যত্রতত্র গতিরোধক নির্মাণ রোধে নিতে হবে কার্যকর ব্যবস্থা। অভিযোগ আছে, অনেক পরিবহণ মালিক চালকদের পর্যাপ্ত বিশ্রামের সুযোগ দেন না। ক্লান্ত-শ্রান্ত চালক গাড়ি চালালে স্বভাবতই তাতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ চালক এবং ত্রুটিমুক্ত যানবাহন প্রয়োজন। সড়ক দুর্ঘটনার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে নানা ধরনের পরামর্শ ও সুপারিশ করা হলেও তা যে অরণ্যে রোদনে পর্যবসিত হচ্ছে, দেশে প্রতিদিন ঘটা সড়ক দুর্ঘটনাগুলোই এর বড় প্রমাণ। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আইনের প্রয়োগের পাশাপাশি আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয়েও যথাযথ নজর দিতে হবে। একই সঙ্গে জনগণকেও হতে হবে সচেতন।