Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

অনন্তলোকে গাফ্ফার চৌধুরী, একুশের গানই তাকে অমর করে রাখবে

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২০ মে ২০২২, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অনন্তলোকে গাফ্ফার চৌধুরী, একুশের গানই তাকে অমর করে রাখবে

একুশের অমর গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফ্রেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’র রচয়িতা, প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত।

তিনি বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় (লন্ডন সময় সকাল ৭টা) লন্ডনের একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। তিনি বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছিলেন। সম্প্রতি তার কন্যার মৃত্যুতে তিনি গভীরভাবে শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলেন।

আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এ দেশের ইতিহাসের বিভিন্ন সন্ধিক্ষণের সাক্ষী তিনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। তিনি ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলজিয়ার্সে জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে অংশ নেন।

মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে নিবন্ধিত স্বাধীন বাংলার প্রথম পত্রিকা সাপ্তাহিক জয় বাংলার প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন তিনি। এ সময় তিনি কলকাতার আনন্দবাজার ও যুগান্তর পত্রিকায়ও কলামিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন।

স্বাধীনতার আগেও আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী এ দেশের স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে নানা বিশ্লেষণধর্মী লেখা লিখেছেন। তিনি ১৯৫৫ সালে একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করতে গিয়ে ঢাকায় কারারুদ্ধ হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার পক্ষে তিনি সবসময় সোচ্চার ছিলেন।

আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী সাংবাদিক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন দৈনিক ইনসাফ পত্রিকায়। পরবর্তীকালে দৈনিক সংবাদ, মাসিক সওগাত, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক আজাদ, দৈনিক পূর্বদেশ, দৈনিক জনপদসহ বহু পত্রপত্রিকায় কাজ করেছেন।

স্বাধীনতার কয়েক বছর পর গুরুতর রোগে আক্রান্ত স্ত্রীর চিকিৎসাজনিত কারণে তিনি যুক্তরাজ্যে প্রবাসী হলেও বাংলাদেশের শীর্ষ দৈনিকগুলোতে গভীর তাৎপর্যপূর্ণ কলাম লিখেছেন। যুগান্তর প্রকাশিত হওয়ার শুরু থেকেই তিনি এ সংবাদপত্রের অন্যতম লেখক ও শুভানুধ্যায়ী ছিলেন। রাজনীতি, সমসাময়িক ঘটনা ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি নিয়ে লেখা তার কলামগুলো অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। সম্ভবত তিনি ছিলেন বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় কলাম লেখক।

মৃত্যুর কয়েকদিন আগপর্যন্ত তিনি যুগান্তরসহ কয়েকটি সংবাদপত্রে নিয়মিত কলাম লিখেছেন। শুধু সংবাদপত্রের কলাম নয়, তার বেশকিছু উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম রয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক ও স্মৃতিকথা। তিনি দেশের সর্বোচ্চ পুরস্কার স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর মৃত্যুতে বাঙালি জাতি একজন মহান দেশপ্রেমিক ও গুণী ব্যক্তিকে হারাল। আমরা হারালাম আমাদের অন্যতম লেখক ও শুভানুধ্যায়ীকে। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর শারীরিক মৃত্যু হলেও তিনি বেঁচে থাকবেন মানুষের হৃদয়ে, বিশেষ করে একুশের অমর গানের মধ্য দিয়েই তিনি অমর হয়ে থাকবেন। আমরা আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি। তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর প্রতি রইল আমাদের শ্রদ্ধা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম