প্রণোদনা ঋণ প্রদানে ধীরগতি
সরকারের উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হচ্ছে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৫ মে ২০২২, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দেশের মানুষ যাতে করোনা মহামারির ক্ষতি দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারে সে লক্ষ্যে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক প্রণোদনা ঋণের ব্যবস্থা করেছে। বিতরণ প্রক্রিয়ায় জটিলতাসহ বিভিন্ন কারণে প্রথম দফা প্রণোদনা ঋণের শতভাগ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। দেশবাসী আশা করেছিল, কর্তৃপক্ষ এমন পদক্ষেপ নেবে যাতে দ্বিতীয় দফা প্রণোদনা ঋণের শতভাগ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়। জানা গেছে, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত বড় শিল্প ও সেবা খাতে অর্থবছরের ১০ মাসে দ্বিতীয় দফা প্রণোদনা ঋণ বিতরণ হয়েছে ৩৪ দশমিক ৩০ শতাংশ; ছোট শিল্পে এ ঋণ বিতরণের হার ৪৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। ঋণ বিতরণ কার্যক্রমে ধীরগতিতে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা হতাশা প্রকাশ করেছেন। ঋণ বিতরণের দিক থেকে নাজুক অবস্থায় আছে বেশ কয়েকটি ব্যাংক। এর মধ্যে একডজনের বেশি ব্যাংক এক টাকাও বিতরণ করতে পারেনি। অপরদিকে কয়েকটি ব্যাংকের ঋণ বিতরণের হার ১ শতাংশেরও কম। ২টি ব্যাংক ঋণ বিতরণ করেছে ২ শতাংশেরও কম। ১৪টি ব্যাংক ৫০ শতাংশের বেশি ঋণ বিতরণ করেছে। সবচেয়ে এগিয়ে আছে চতুর্থ প্রজন্মের একটি ব্যাংক। ব্যাংকটির লক্ষ্য ছিল মাত্র ৫০ কোটি টাকা। এ ব্যাংকটি লক্ষ্যের শতভাগ ঋণ বিতরণ করতে সক্ষম হয়েছে। একটি বিদেশি ব্যাংক ৯৫ শতাংশ ঋণ বিতরণ করতে সক্ষম হয়েছে।
পর্যটন খাতের হোটেল, মোটেল ও থিম পার্কের কর্মচারীদের বেতন-ভাতার জন্য ১ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন হলেও কোনো ঋণ বিতরণ হয়নি। প্রথম দফা প্রণোদনা ঋণের ক্ষেত্রেও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানোর লক্ষ্যে শতভাগ বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের সহায়তার জন্য ৮১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও বিতরণ করা হয়েছিল মাত্র ২৩ কোটি টাকা। প্রথম দফা প্রণোদনা ঋণের ক্ষেত্রে লক্ষ করা গিয়েছিল, যেসব প্যাকেজের আওতায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বেশি উপকৃত হতে পারে, সেসব প্যাকেজের বিপুল পরিমাণ অর্থ বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। দ্বিতীয় দফা প্রণোদনা ঋণের ক্ষেত্রেও একই ধরনের প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। করোনা মহামারির কারণে দেশে নতুন করে বিপুলসংখ্যক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। কাজেই সেসব মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য যেসব কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে সেসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। মনে রাখতে হবে, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ন্যূনতম ক্রয় ক্ষমতা না থাকলে দেশের সার্বিক উন্নয়নের গতি হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রথম দফা প্রণোদনা ঋণের ক্ষেত্রে প্রণোদনা গ্রহীতাদের একটি অংশ এবং কয়েকটি ব্যাংক বিভিন্ন শর্ত মানতে ব্যর্থ হয়েছিল। প্রণোদনায় ঋণ নিয়ে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান জালিয়াতিও করেছিল। তারা শর্ত ভঙ্গ করেছিল। কোনো কোনো ব্যাংকের কর্মীরা সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের বেআইনি কর্মকাণ্ডে সহায়তা দিয়েছিল। দ্বিতীয় দফা প্রণোদনা ঋণের শতভাগ লক্ষ্য অর্জনের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এ খাতে যাতে কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতি না হয় সেজন্যও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।