প্রতীকী ছবি
গাজীপুর শহরের কুনিয়া তারগাছ শিংপাড়ায় কিশোর গ্যাং সদস্যদের অস্ত্র হাতে ব্যাপক তাণ্ডবের সচিত্র খবর প্রকাশিত হয়েছে গতকালের যুগান্তরে। জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারি হাবীব-আরিফের নেতৃত্বে কিশোর গ্যাং কর্তৃক একটি গলিতে অস্ত্রের মুখে গণহারে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনতাইকালে স্থানীয় দুই ব্যক্তি এতে বাধা দেয়। এর জের ধরে ধারালো অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত কিশোর গ্যাং সদস্যরা এলাকায় মহড়া দেওয়ার পাশাপাশি রাস্তায় যাকে পেয়েছে তাকেই পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করেছে। হামলায় আহত এক ব্যক্তি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় কাউন্সিলরের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে বেড়ে ওঠা কিশোর সন্ত্রাসীরা তারই পুত্র সাব্বিরের অনুসারী। এ ব্যাপারে যথাযথ তদন্ত করে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
কেবল গাজীপুর নয়, সারা দেশেই কিশোর সন্ত্রাসীদের অপরাধমূলক তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিষয়টি শুধু অভিভাবক শ্রেণি নয়, রাষ্ট্রের জন্যও দুর্ভাবনার। যারা কিশোর বয়সে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে, তারা যে একদিন শীর্ষ সন্ত্রাসীর খাতায় নাম লেখাবে না, তার নিশ্চয়তা কী? সমাজদেহে ব্যাপকভাবে এ ক্ষত বিস্তারের আগেই প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের এ ব্যাধি রোধকল্পে এগিয়ে আসা উচিত। এক্ষেত্রে পরিবারের বড় ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করি আমরা। শিশুরা অসৎ সঙ্গ বর্জনসহ যে কোনো ধরনের অনৈতিক কাজ থেকে দূরে থাকার শিক্ষা যদি জীবনের শুরুতেই পায়, তাহলে অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে বলে আশা করা যায়। আজকাল মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট ও আকাশ সংস্কৃতির থাবায় অনেক কিশোর-কিশোরীই বিপথগামী হচ্ছে। এদের মধ্যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও মাদক কারবারে যুক্তরা কী ভয়াবহ পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, গাজীপুরের ঘটনা তার বড় প্রমাণ। কিশোর গ্যাং তথা কিশোর অপরাধ বর্তমানে একটি সামাজিক সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আজকাল এই অপরাধীদের হাতে দেশের স্কুল-কলেজগামী কিশোরীরা শুধু লাঞ্ছিত, অপমানিত ও যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে না, একইসঙ্গে তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন মাদকদ্রব্যের বিস্তার ঘটছে, যা সমাজের জন্য অশনিসংকেত। ক্ষেত্রবিশেষে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত ও নিপীড়নের মাত্রা এতটাই প্রকট হয় যে, ভুক্তভোগী অনেকে আত্মহননের পথেও পা বাড়ায়।
আশার কথা, কিশোর বয়সিদের মধ্যে সংবেদনশীল আচরণ, সহমর্মিতা ও মূল্যবোধ জাগ্রত করার লক্ষ্যে সরকার দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে কিশোর-কিশোরী ক্লাব প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় এ ধরনের ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ১১ থেকে ১৯ বছর বয়সি ছেলেমেয়েরা নিজ নিজ এলাকায় স্থাপিত এসব ক্লাবের সদস্য ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে। সমাজে বিদ্যমান নানা অসঙ্গতির ওপর বিতর্ক অনুষ্ঠানের আয়োজন ও সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চার পাশাপাশি ক্লাবের সদস্যরা হরেকরকম খেলাধুলার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ারও সুযোগ পাবে। প্রতিটি ক্লাবেই বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় ক্রীড়া-সরঞ্জাম সরবরাহ করা ছাড়াও বই ও পত্র-পত্রিকা প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে। সব মিলে উদ্যোগটি যে প্রশংসনীয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সারা দেশে এ ধরনের ক্লাব প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি কিশোর অপরাধ তথা কিশোর গ্যাংয়ের জন্ম ও বিকাশ রোধে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ পরিবার ও সমাজের আন্তরিক ভূমিকা কাম্য।