ভোজ্যতেল নিয়ে কারসাজি
বাজার মনিটরিং জোরদার করতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১১ মে ২০২২, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ভোজ্যতেল নিয়ে সারা দেশে যা ঘটছে, তা ভোক্তাদের কাছে অকল্পনীয়। জানা যায়, অসাধু ব্যবসায়ীদের গুদামে এখনো প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন ভোজ্যতেল মজুত রয়েছে। আট থেকে দশ দিন লুকিয়ে রাখার পর এখন প্রকাশ্যে বাড়তি দামে বিক্রি করে ভোক্তাদের পকেট থেকে প্রায় ১৬০ কোটি টাকা লুটে নিয়েছে অসাধুরা।
ভোক্তাদের এই ক্ষতির দায় কে নেবে? যেহেতু ভোজ্যতেলের মতো একটি নিত্যপণ্য নিয়ে ভোক্তাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, সেহেতু মজুতদারসহ ভোক্তাদের দুর্ভোগ সৃষ্টিকারী সবার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। তা না হলে এই সিন্ডিকেটের নৈরাজ্য নানারূপে প্রকাশ পেতে পারে, যার জন্য সরকারকে বারবার বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হবে।
সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকটে নাকাল সারা দেশের মানুষ। এমন সংকটে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অবৈধভাবে তেল মজুত করে বাড়তি দামে সেগুলো বিক্রি করছে। কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে দোকান ও গুদাম থেকে উদ্ধার করা হচ্ছে মজুত করা তেল। বস্তুত বাজারে জোরালো মনিটরিং না থাকায় বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ী ও মজুতদারদের মনে ধারণা জন্মেছে যে, তারা যখন-তখন ভোক্তাদের সঙ্গে যেমন খুশি তেমন আচরণ করতে পারবেন।
জানা যায়, কারসাজিতে জড়িত চক্রটি গোপনে ব্যবসায়ীদের মধ্যে খবর ছড়িয়ে দেয় ভোজ্যতেলের দাম বাড়বে। এ খবরে বেশি মুনাফার লোভে ঈদের আগ থেকে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী পণ্যটি লুকিয়ে মজুত করে। মজুতের মাধ্যমে বাজার তেলশূন্য করা হয়। এ অবস্থায় ৫ মে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নতুন দাম নির্ধারণ করলে বাজারে লুকানো তেল দৃশ্যমান হতে থাকে। কম দামে কেনা তেল মজুত থেকে বের করে নতুন বেঁধে দেওয়া বেশি দামে বিক্রি করছে বিক্রেতারা।
গড়ে লিটারে ৪০ টাকা বাড়তি মুনাফা ধরে বিপুল পরিমাণ লুকানো তেল বিক্রি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকা প্রকাশ্যে পকেটে ভরছে। প্রশ্ন হলো, এই সিন্ডিকেটের সবাইকে শনাক্ত করতে দেরি হচ্ছে কেন? সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের লোক দেখানো অভিযানে চললে এই সিন্ডিকেটের নৈরাজ্যের কারণে সরকারকে বারবার বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হবে।
৫ মে ভোজ্যতেলের যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে এক মাস আগে যে দাম ছিল তা বিবেচনায় নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেশের বাজারে তেলের মূল্য নির্ধারণ করেছে। অথচ বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে তিন থেকে চার মাস আগের ক্রয় করা তেল এখন ভোক্তাদের হাতে এসে পৌঁছেছে।
ঈদের পরপর যেসব ভোক্তা জরুরি প্রয়োজনে সয়াবিনের পরিবর্তে অন্যান্য তেল ক্রয়ে বাধ্য হয়েছে, তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশের নীতি-নৈতিকতা বলে কিছু নেই। কারসাজি করে ভোক্তাদের দুর্ভোগ সৃষ্টি করে তারা লাভবান হতে চায়। কাজেই সরকারকে এদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে।
দেশের ভোজ্যতেলের মোট চাহিদার বড় অংশই আমদানিনির্ভর। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে এমন আমদানিনির্ভরতার ঝুঁকি সম্পর্কে সবাই অবহিত। কাজেই ভোজ্যতেলের আমদানিনির্ভরতা কমানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হলে আমদানিনির্ভরতা কাটানো সম্ভব।