করোনা-পরবর্তী বাজেট
বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুনির্দিষ্ট রূপরেখা থাকতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৮ মে ২০২২, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
করোনার কারণে প্রায় দুই বছর ধরে দেশের বিনিয়োগ খাতে স্থবিরতা বিরাজ করছে; বহু ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিধি সংকুচিত হয়েছে। এ সময় বিপুলসংখ্যক কর্মী চাকরিচ্যুত হয়েছে; অনেকের বেতন-ভাতা কমেছে। প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক নতুন কর্মী শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে। জানা গেছে, করোনার কারণে দেশে কয়েক কোটি মানুষ কর্মহীন হয়েছে; যাদের মধ্যে বিপুলসংখ্যক মানুষ আগের পেশায় ফিরতে পারেনি। বস্তুত গত দুই বছর বিনিয়োগ কম হওয়ায় দেশে বেকার জনগোষ্ঠীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। তা না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। বর্তমানে দেশের পাশাপাশি বৈশ্বিক অর্থনীতিতেও নানা ধরনের সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এ অবস্থায় দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিধি বাড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে এমন পদক্ষেপ নিতে হবে যা কর্মসংস্থান বাড়াতে ও অর্থনীতিকে চাঙা করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। এক্ষেত্রে কৌশল নির্ধারণ করা দরকার যাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আকৃষ্ট হন। তা না হলে দেশে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না। অতিরিক্ত আমদানিনির্ভরতা বাজারের ওপর কী প্রভাব ফেলে তা সয়াবিনের দাম বৃদ্ধিতে আবারও স্পষ্ট হলো। কাজেই নতুন অর্থবছরের বাজেটে এমন পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে স্থানীয় শিল্পগুলো কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বিকশিত হয়। বস্তুত এখন আমাদের এমন পদক্ষেপ নিতে হবে যা এলডিসি উত্তরণ-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পাশাপাশি দেশের টেকসই উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
লক্ষ করা গেছে, মাঝে মাঝে গ্যাস সংকটের কারণে শিল্পকারখানার উৎপাদনে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটে। কখনো এমন পরিস্থিতিও সৃষ্টি হতে পারে, যখন পর্যাপ্ত অর্থের বিনিময়েও সময়মতো প্রয়োজনীয় পরিমাণে জ্বালানি আমদানিতে নানা রকম জটিলতা সৃষ্টি হবে। কাজেই জ্বালানি খাতে আমদানিনির্ভরতা কাটানোর জন্যও যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। বর্তমানে অতিরিক্ত মূল্যস্ফীতির কারণে হতদরিদ্র, নিুআয়ের মানুষ, শিক্ষিত বেকার, বিভিন্ন শ্রেণির ভোক্তাসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা সংকট থেকে বের হতে পারছেন না। কাজেই নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের যথাযথ কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না থাকলে হতদরিদ্র ও সীমিত আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাবে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা যাতে না কমে, সেজন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। বস্তুত দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে দেশে আইনের শাসন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বাণিজ্যসহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করাসহ এ সম্পর্কিত নীতিমালা আরও সহজ করা প্রয়োজন।