রেমিট্যান্সের বদলে স্বর্ণ!
ব্যাগেজ রুলের পরিবর্তন দরকার
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২২, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দেশের অর্থনীতিতে এক নেতিবাচক নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। আগে প্রবাসীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠাতেন। এখন তাদের অনেকে উপার্জিত অর্থে স্বর্ণ কিনে তা দেশে নিয়ে আসছেন। বলা বাহুল্য, এতে দেশ বঞ্চিত হচ্ছে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা থেকে। কমে যাচ্ছে রেসিট্যান্স প্রবাহ। এ কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থায় দেখা দিয়েছে ভারসাম্যহীনতা। আর ডলারের বিপরীতে কমে যাচ্ছে টাকার মান। স্বাভাবিকভাবেই এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে ব্যাগেজ রুলের আওতায় বিদেশ থেকে স্বর্ণ আনার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এ সুযোগকেই কাজে লাগাচ্ছে প্রবাসীরা। ঢাকা কাস্টম হাউজের উপকমিশনার সানোয়ারুল কবীর যুগান্তরকে জানিয়েছেন, প্রতি মাসে বৈধভাবে দেশে তিন মেট্রিক টন স্বর্ণ আসছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, ব্যবহারের জন্য স্বর্ণালংকার আনতে এর জন্য কর দিতে হয় না।
সানোয়ারুল কবীর যা-ই বলুন না কেন, যুগান্তরের অনুসন্ধানে জানা গেছে, বর্তমানে ব্যাগেজ রুলের আওতায় প্রকৃতপক্ষে ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার কেজি অর্থাৎ ৪ থেকে সাড়ে ৪ মেট্রিক টন সোনা আসছে। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি কেজি স্বর্ণ ৫০ থেকে ৫৫ লাখ টাকায় কেনাবেচা হচ্ছে। এ হিসাবে দেশে আনা স্বর্ণের দাম পড়ে ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ বৈধভাবেই প্রতি মাসে আড়াই হাজার কোটি টাকার স্বর্ণ আসছে দেশে। বিমানবন্দর অতিক্রম করার পরই এসব স্বর্ণ স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ লাখ টাকায়। আর কেজিতে মুনাফা হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা।
রেমিট্যান্সের বদলে দেশে যে স্বর্ণ আসছে, এর পেছনে একটি সিন্ডিকেট রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই সিন্ডিকেট স্বর্ণ আনার কাজে প্রবাসী ও বিদেশ থেকে আগত বাংলাদেশিদের কাজে লাগাচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছে, যারা স্বর্ণ আনছেন তাদের পারিবারিক অবস্থা ভালো নয়। প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক, তাহলে তারা স্বর্ণ আনছেন কেন? বস্তুত যারা স্বর্ণ আনছেন, তারা ক্যারিয়ার হিসাবে কাজ করছেন। স্বর্ণ আনার বিনিময়ে তারা আলোচ্য সিন্ডিকেটের কাছ থেকে কমিশন পাচ্ছেন।
বলতেই হবে, রেমিট্যান্সের পরিবর্তে দেশে স্বর্ণ আসার প্রধান কারণ বর্তমান নীতিমালা। এ নীতিমালায় বৈধভাবেই দেশে স্বর্ণ আনা যায় বলে সেদিকেই ঝুঁকছেন প্রবাসীরা। কম দামে স্বর্ণ কিনে দেশে এনে তা বেশি দামে বিক্রি করা গেলে সে পথেই হাঁটবেন প্রবাসীরা, এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং এ প্রবণতা রোধ করতে হলে নীতিমালার পরিবর্তন দরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন সে কথাই বলেছেন। তিনি বলেছেন, স্বর্ণ হচ্ছে হার্ড কারেন্সি। মুদ্রা যেমন তাৎক্ষণিকভাবে হাতবদল করা যায়, স্বর্ণও তেমনি। ফলে বেশি লাভ পাওয়া যাবে যেদিকে, সেদিকেই ঝুঁকবেন প্রবাসীরা।
আমাদের কথা হচ্ছে, দেশে স্বর্ণ আসার বিষয়টির পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে হবে এবং অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে পরিবর্তন করতে হবে নীতিমালা। দেশে রেমিট্যান্সের প্রবাহ কমে যাওয়া অর্থনীতির জন্য কোনো ভালো লক্ষণ নয়। আরেকটি কথা, দেশে অবৈধভাবে প্রতি মাসে সমপরিমাণ স্বর্ণ আসছে। অথচ প্রতি মাসে ৫০ থেকে ৬০ কেজি স্বর্ণ আটক করা সম্ভব হচ্ছে। অবৈধ পথে আসা সোনার বিশাল অংশ থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। অবৈধ পথে সোনা আসার বিষয়টিও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।