যানজটের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি, বিষয়টি গুরুত্ব পাওয়ার দাবিদার
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২০২২, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রাজধানীতে যানজট এক নৈমিত্তিক ঘটনা। বর্তমান সময়ে এই যানজট তীব্র আকার ধারণ করেছে। বলা হয়ে থাকে, যানজটে শ্রমঘণ্টা নষ্ট হয় এবং যাত্রীসাধারণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন।
কিন্তু শ্রমঘণ্টা নষ্ট ও আর্থিক ক্ষতির বিষয় দুটি বহুল আলোচিত হলেও যানজটের কারণে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের যে বড় ধরনের ক্ষতি হয়, তা আলোচনায় তেমন আসে না।
এই শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি নানাভাবে হয়ে থাকে। দীর্ঘক্ষণ যানজটে পড়ে থাকলে যাত্রীদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায় এবং উদ্বেগ বাড়ে। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। যানজটের কারণে রক্তচাপ বাড়ে; ফুসফুস ক্যানসার ও শ্বাসকষ্টের ঝুঁকি দেখা দেয়।
এছাড়া কিডনি, হৃদরোগ ও প্রজননতন্ত্রেরও ক্ষতি সাধিত হয় যানজটের কারণে। গবেষণায় আরও পাওয়া গেছে, নিয়মিত যানজটের বিরক্তি থেকে সংসার ভাঙার ঝুঁকিও বাড়ে ৫০ শতাংশ। ওদিকে শিশুদের বুদ্ধিমত্তার বিকাশ এবং স্নায়বিক ক্ষতির অন্যতম কারণ যানজট বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
বস্তুত যানজট সৃষ্ট বিপত্তির শেষ নেই যেন। যানজটে আটকে থেকে সময় ও আর্থিক ক্ষতির উদ্বেগ থেকে অনেক যাত্রী চালক কিংবা হেলপারের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ছেন।
এতে এমন মানসিক চাপ তৈরি হতে পারে যে, সংশ্লিষ্টের হার্ট অ্যাটাক পর্যন্ত হতে পারে। আরেক ধরনের সমস্যা হচ্ছে, বিশেষত নারী যাত্রীর প্রাকৃতিক চাপ তৈরি হলে তার কিছু করার থাকে না। অথচ প্রাকৃতিক চাপকে অগ্রাহ্য করলে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে মারাত্মক। এতে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। যানজটে আটকে থেকে অনেক চালক অহেতুক হর্ন বাজিয়ে তৈরি করছে শব্দদূষণও।
বলার অপেক্ষা রাখে না, যানজট সমস্যার সুরাহা করা না গেলে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়বে বৈ কমবে না। এ সংকট থেকে কীভাবে উত্তরণ ঘটানো যায়, তা নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে হবে। ঢাকায় যানজটে প্রতিদিন প্রায় ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে।
এখানকার যানবাহনের চলার গতি বর্তমানে মানুষের হাঁটার গতির সমান বলে উঠে এসেছে এক গবেষণায়। অথচ এক দশক আগেও ঢাকায় যানবাহনের চলার গতি ছিল ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার। এখন সেই গতি ঘণ্টায় ৬ দশমিক ৪ কিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। এই অচলাবস্থা থেকে রাজধানীবাসীকে মুক্ত করতে হবে অবশ্যই। আর তা করতে হলে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ আমলে নিয়ে দ্রুতই নিতে হবে কার্যকর ব্যবস্থা।