নকশাবহির্ভূত বাঁধ নির্মাণ
দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২২, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের বেশকিছু ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে গেছে। এর ফলে হাওড়ের বিপুল পরিমাণ বোরো ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এ আগাম বন্যার কারণে বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির বিষয়টি ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে।
মঙ্গলবার যুগান্তরে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালে হাওড়ে বিপর্যয়ের পর ৫ অর্থবছরে ফসল রক্ষায় সরকার ৫৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। কিন্তু এ অর্থ ব্যয়ে যথাযথভাবে বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার হয়নি। বাঁধ ঘিরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নকশা আগাম বন্যা রোধে তেমন কোনো ভূমিকা রাখেনি। পাউবোর গোপন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত সুনামগঞ্জ জেলার ১৬৮টি বাঁধের ২৩৬টি স্থানে ত্রুটি ধরা পড়েছে। এসব ত্রুটি নকশাবহির্ভূত বাঁধ নির্মাণের ইঙ্গিত দিচ্ছে, যা গোটা হাওড় অঞ্চলের জন্য এখন অশনিসংকেত হয়ে দেখা দিয়েছে। বস্তুত দুর্নীতির কারণে সুনামগঞ্জে নকশা অনুযায়ী কোনো বাঁধেরই কাজ হয়নি। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
বাঁধ নির্মাণে নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। অভিযোগ আছে, হাওড় রক্ষা বাঁধের নামে শুরু থেকেই অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প নেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে অপচয় ও দুর্নীতির সুযোগ থাকে বেশি। বাঁধ নির্মাণে গাফিলতি ও দুর্নীতি হলে স্থানীয় জনগণকে এর কতটা মাশুল দিতে হয় তার প্রমাণ ২০১৭ সালের এপ্রিলে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে হাওড়ের বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে ব্যাপক ফসলহানির ঘটনা। সেসময় তাহিরপুরের শনির হাওড় রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড পাঁচটি প্যাকেজ বাঁধ নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করলেও কাজ পাওয়া ঠিকাদাররা ১০ থেকে ১৫ ভাগের বেশি কাজ করেনি। এ কারণে আকস্মিক বন্যায় ফসল ডুবেছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন হাওড়টির ধানের ওপর সারা বছরের জীবিকা নির্বাহকারী হাজার হাজার কৃষক। এবারও এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
হাওড়াঞ্চলের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিরোধে ঠিকাদারি পদ্ধতি বাদ দিয়ে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করার কথা আমরা জানি। এ নীতিমালা অনুযায়ী হাওড়ের প্রকৃত কৃষক এবং হাওড়ে যাদের জমি আছে তাদের সমন্বয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে কমিটি (পিআইসি) গঠন করে প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু এসব কমিটি গঠনে নীতিমালা সঠিকভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে কিনা সে প্রশ্ন রয়ে গেছে।
কারণ বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম যে বন্ধ হয়নি এর নানা আলামত পাওয়া যাচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে গঠিত পিআইসি এবারও যেনতেনভাবে মাটির কাজ করে চলে গেছে। এরপর আকস্মিক বন্যা দেখা দেওয়ায় জেলার প্রায় ২শ পিআইসির কাজে বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরা পড়েছে। বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারে যথাযথ পর্যবেক্ষণ হলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না বলে মনে করি আমরা। এক্ষেত্রে যে গাফিলতি ও অনিয়ম হয়েছে, তা কোনোভাবেই বরদাশত করা উচিত নয়। দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।