অসমাপ্ত ২৯৩ উন্নয়ন প্রকল্প
এডিপির শতভাগ বাস্তবায়ন জরুরি
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২২, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সরকারের নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প কেন বাস্তবায়িত হচ্ছে না, এর কারণ উদ্ঘাটন জরুরি। শুরুতে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে শুরু হলেও প্রকল্প শেষ করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের আগ্রহের ঘাটতিতে অন্তত ২৯৩টি উন্নয়ন প্রকল্প ঝুলে থাকার অভিযোগ উঠেছে, যা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। পরিকল্পনা কমিশনের বক্তব্য অনুযায়ী, ঝুলে থাকা প্রকল্পগুলোর মধ্যে এক যুগেরও বেশি অর্থাৎ প্রায় ১৩ বছর চলছে-এমন প্রকল্প রয়েছে দুটি। এছাড়া ১২ বছর ধরে চলমান আছে তিনটি, ১১ বছরের প্রকল্প দুটি এবং ১০ বছর ধরে চলছে দুটি প্রকল্প। এগুলোর বাইরে ৯ বছর ধরে চলমান সাতটি প্রকল্প, আট বছরের প্রকল্প ১৩টি এবং সাত বছরের রয়েছে ১৬টি উন্নয়ন প্রকল্প। অথচ এসব প্রকল্প গড়ে দুই থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল।
উদ্বেগজনক হলো, এডিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রতিবছর একই চিত্র প্রত্যক্ষ করছি আমরা। বস্তুত প্রতিবছর প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা ভুল প্রমাণিত হচ্ছে এবং এর ফলে এডিপির বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হচ্ছে। সাধারণত বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের চাহিদা ও সরকারের সক্ষমতার মধ্যে সমন্বয় করে এডিপি অনুমোদন দেওয়ার কথা বলা হলেও প্রতিবছরই মাত্রাতিরিক্ত প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি খারাপ প্রবণতা। দ্রুত এটি কাটিয়ে ওঠা উচিত। একই সঙ্গে কোনো প্রকল্প অনুমোদনের আগে যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করার পাশাপাশি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জবাবদিহির বিষয়টিও নিশ্চিত করা জরুরি। প্রকল্প কতটা সুন্দর, তা দেখার আগে দেখতে হবে-বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এটি প্রণয়ন করা হয়েছে কি না এবং তা সঠিক সময়ে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব কি না।
অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের অধিকাংশই সময় নির্ধারণসহ অন্যান্য বিষয়ে দক্ষ হন না। অবশ্য এর বাইরে নানা ধরনের কারসাজি থাকার অভিযোগও রয়েছে। এ কারণে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যেমন সম্ভব হয় না, তেমনই প্রকল্পের ব্যয়ও কয়েক গুণ বৃদ্ধি পায়। একই সঙ্গে বৃদ্ধি পায় জনদুর্ভোগও। আশঙ্কার বিষয় হলো, সুষ্ঠুভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দেশে আগে যেসব সমস্যা বিদ্যমান ছিল; এর অধিকাংশ এখনো বহাল রয়েছে, যা থেকে মুক্ত হওয়া জরুরি। ইতঃপূর্বে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) প্রকল্প বাস্তবায়নে বেশকিছু বাধা চিহ্নিত করেছিল। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো-সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই প্রকল্প গ্রহণ ও প্রকল্প তৈরিতে দুর্বলতা এবং দক্ষতার অভাব। এছাড়া রয়েছে যেনতেনভাবে প্রকল্প তৈরি, বাস্তবায়ন পর্যায়ে কার্যকর তদারকির অভাব, নিয়মিত ও কার্যকরভাবে পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) এবং পিএসসি (প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটি) বৈঠক না হওয়া। এছাড়া জমি অধিগ্রহণে জটিলতা, দরপত্র প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতাসহ বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পে উন্নয়ন সহযোগীদের সময়ক্ষেপণকেও এক্ষেত্রে দায়ী করা চলে। পাশাপাশি রয়েছে প্রয়োজনীয় অর্থছাড় না হওয়া, প্রকল্প পরিচালকদের অদক্ষতা, ঘন ঘন প্রকল্প পরিচালক বদল, দক্ষ ও কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন জনবলের অভাব, ঠিকাদারদের পেশাদারির অভাব, ভৌত নির্মাণকাজে ধীরগতি, প্রকল্প প্রস্তাব তৈরিতে দ্রব্যের মান ও মূল্য নির্ধারণে অদূরদর্শিতা প্রভৃতি। এসব সমস্যা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণ করে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হবে-এটাই প্রত্যাশা।