ডায়রিয়ার দীর্ঘস্থায়ী প্রকোপ
বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরি
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২২, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
মানুষের জীবনযাত্রার মান বেড়েছে, অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণের বিষয়ে সতর্কতাও বেড়েছে। তারপরও লক্ষ করা যায়, প্রতিবছর দেশে তীব্র গরম আবহাওয়ায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। এবারও মার্চের শুরু থেকে সারা দেশে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। জানা গেছে, মার্চে সারা দেশে ১ লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি মানুষ ডায়রিয়ার আক্রান্ত হয়েছে। ৮ থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত রাজধানীর হাসপাতালে ১ হাজার ১৫০ জনের মতো রোগী এসেছে কেবল যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে। এখন মিরপুর, দক্ষিণখান, বাড্ডা, মোহাম্মদপুর, ডেমরা, শ্যামপুর, আদাবর-এসব এলাকা থেকে বেশিসংখ্যক ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। রাজধানীর অন্যান্য এলাকা থেকেও প্রতিদিন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। এছাড়া ডায়রিয়া রোগী আসছে রাজধানীর বাইরে থেকেও। আইসিডিডিআর,বি সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ মার্চ ১ হাজার ৫৭ ডায়রিয়া রোগী ভর্তি করা হয়। এরপর থেকে কোনোদিন ভর্তি হওয়া ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা এক হাজারের নিচে নামেনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মৌসুমি আবহাওয়ার পরিবর্তন ডায়রিয়া সংক্রমণের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করলেও রোগটি ছড়ানোর বড় কারণ হলো অতিরিক্ত গরম, দূষিত পানি, অস্বাস্থ্যকর পয়ঃনিষ্কাশন এবং অনিরাপদ খাদ্য পরিবেশন। এসব বিষয়ে গুরুত্বারোপের পাশাপাশি ডায়রিয়ার টিকা প্রয়োগ নিশ্চিত করতে পারলে পানিবাহিত রোগটি মোকাবিলা করা সম্ভব। এজন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের সঙ্গে জনগণকে সম্পৃক্ত করা জরুরি হয়ে পড়ছে। এ মুহূর্তে উচিত হবে যেসব এলাকা থেকে ডায়রিয়া রোগী বেশি আসছে, সেসব এলাকায় রোগটি প্রতিরোধে বেশি নজর দেওয়া। বিশেষ করে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও নিরাপদ খাবার পরিবেশনের পাশাপাশি কলেরার টিকা দেওয়া। আইসিডিডিআর,বির গবেষণায় দেখা গেছে, কলেরা টিকার মাধ্যমে ৫২ শতাংশ ডায়রিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব। জানা গেছে, ঢাকা শহরের অনিরাপদ পানি সরবরাহ ও ওয়াসার পানির লাইনের সঙ্গে স্যুয়ারেজ লাইন এক হয়ে যাওয়ায় ডায়রিয়া বাড়ছে। অনেকে বাধ্য হয়ে বাইরের খাবার খাচ্ছে। অনেকের বাড়িতে খাবার সংরক্ষণ ব্যবস্থা না থাকায় বাসি খাবার খাচ্ছে। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা এবং নিরাপদ খাবার পরিবেশন নিশ্চিত করতে পারলে ডায়রিয়া কমবে। সতর্কতার অংশ হিসাবে রাস্তার পাশের খোলা খাবার বা শরবতজাতীয় পানীয় পরিহার করতে হবে। ডায়রিয়ায় প্রচুর পানিশূন্যতা দেখা দেয়। ফলে কিডনি অকেজো হওয়াসহ রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই ঝুঁকি এড়াতে দ্রুত চিকিৎসকের পারমর্শ নিতে হবে।
এবার রাজধানীতে ডায়রিয়ার প্রকোপের সবচেয়ে বড় কারণ হিসাবে দূষিত পানির ব্যবহারকে চিহ্নিত করা হয়েছে। আইসিডিডিআর,বি ও আইডিসিআর রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় জরিপ করে এ তথ্য পেয়েছে। বেশ কয়েকটি এলাকায় অনুসন্ধান করে দেখা গেছে-সেখানে প্রথম ডায়রিয়ার শুরু হয়েছে দূষিত পানি ব্যবহারের মাধ্যমে। কাজেই ডায়রিয়া মোকাবিলার অংশ হিসাবে রাজধানীসহ সারা দেশে বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। দেশে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক কারণেই বেশকিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন পড়েছে। আবহাওয়া পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কিছু নেই, তবে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ডায়রিয়ার সংক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করা সম্ভব। এসব সতর্কতামূলক ব্যবস্থার অন্যতম হলো পানি ফুটিয়ে পান করা। বিশুদ্ধ পানি পান করার কোনো বিকল্প নেই।