টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদন
টিকা কার্যক্রমে অর্থ ব্যয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২২, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দেশের স্বাস্থ্য খাতে নানারকম অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়টি সর্বজনবিদিত। এবার করোনাভাইরাস মোকাবিলায় টিকা কার্যক্রমে অর্থ ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এ বাবদ খরচ হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা।
কিন্তু মঙ্গলবার এক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর পক্ষ থেকে বলা হয়, এ খরচ ১৮ হাজার কোটি টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। টিআইবির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, কেন্দ্রে টিকা গ্রহণের সময় ২ শতাংশ সেবাগ্রহীতা অনিয়ম-দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। দ্রুত টিকা পেতে কিছু সেবাগ্রহীতাকে অর্থও ঘুস দিতে হয়েছে।
‘করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলায় সুশাসন : অন্তর্ভুক্তি ও স্বচ্ছতার চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। ২০২১ সালের আগস্ট থেকে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত গবেষণাটি করা হয়।
টিকা কার্যক্রমে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর তুলনায় আমরা এগিয়ে আছি। সার্কভুক্ত দেশের মধ্যে আমাদের অবস্থান তৃতীয়। এটি একটি ইতিবাচক দিক। তবে টিকা কার্যক্রমের বেশকিছু ঘাটতি রয়েছে। জাতীয় পরিকল্পনায় বলা হয়েছিল, দুর্গম এলাকা, বস্তিবাসী, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিবন্ধন করা হবে। তাদের ভ্রাম্যমাণ টিকা দেওয়া হবে।
কিন্তু বাস্তবে তাদের নিয়ে সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম দেখা যায়নি। এ কারণে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর টিকাপ্রাপ্তির হার জাতীয় হারের তুলনায় অনেক কম। উল্লেখ্য, নারী ও প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে অনেক কেন্দ্রে বিশেষ ব্যবস্থায় ত্রুটি ছিল। ফলে টিকা নিতে গিয়ে এ জনগোষ্ঠীকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
টিকার ক্ষেত্রে গোপনীয়তার সংস্কৃতি চলছে। তথ্যের অবাধ প্রবাহ না থাকলে দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি হয়। টিকার মূল্য গোপন রাখার শর্তে একটি দেশের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ক অন্য তথ্যগুলোও সহজলভ্য নয়। এসব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
শোনা যায়, এ খাতে সব ধরনের কেনাকাটা, নিয়োগ, পদায়ন, বদলিসহ এমন কোনো কাজ নাকি নেই, যেখানে দুর্নীতি হয় না। একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদারের সমন্বয়ে স্বাস্থ্য খাত ঘিরে গড়ে উঠেছে অপ্রতিরোধ্য সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের কবল থেকে স্বাস্থ্য খাতকে মুক্ত করা জরুরি। স্বাস্থ্য ও অন্যান্য খাতে দেশে বিরাজমান অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে এমন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, যাতে দুর্নীতিবাজরা আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যেতে না পারে।
তবে শুধু আইন করে নয়, দেশ থেকে দুর্নীতি হঠাতে হলে এর বিরুদ্ধে জনসচেতনতা গড়ে তোলাও জরুরি। সাধারণ মানুষের কল্যাণ ও সেবার নামে, বিশেষ করে এ করোনাকালে স্বাস্থ্য খাতে লুটপাট ও দুর্নীতির যে রাজত্ব কায়েম হয়েছে, তার মূলোৎপাটনে চুনোপুঁটিদের পাশাপাশি রাঘববোয়ালদেরও আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।