সংসদে উপাচার্য প্রসঙ্গ
এমপিদের কথায় সত্যতা রয়েছে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০২২, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
গত মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পিরোজপুর বিল, ২০২২’ পাশ হওয়ার আগে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিএনপি ও জাতীয় পার্টির কয়েকজন সংসদ সদস্য। একই সঙ্গে দলীয় বিবেচনার বাইরে গিয়ে প্রকৃত শিক্ষাবিদদের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে নিয়োগ দেওয়ার দাবি তোলেন তারা। শিক্ষার মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, আগে উপাচার্যদের প্রসঙ্গ এলে শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসত, এখন তাদের দুর্নীতির খবর শুনে লজ্জা পেতে হয়। তিনি আরও বলেন, উপাচার্যরা এখন পরিবারের সদস্যদের নিয়োগ দিচ্ছেন, দুর্নীতি করছেন। বিএনপির হারুনুর রশীদ অভিযোগ করেছেন, উপাচার্যরা যা ইচ্ছা তাই করছেন।
জবাবে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের কার্যকলাপ নিয়ে কিছু কিছু সমালোচনা আছে, যেগুলোয় সত্যতাও আছে। তবে তার মানে এই নয় যে, ঢালাওভাবে সবাই খারাপ। দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়ে খারাপ মন্তব্য করা সমীচীন নয় বলেও বক্তব্য রেখেছেন তিনি। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের অনেক বরেণ্য শিক্ষক আছেন, যাদের উপাচার্য হিসাবে পেলে আমরা গর্ব অনুভব করতে পারতাম। কিন্তু তাদের অনেকেই এই প্রশাসনিক দায়িত্ব নিতে আগ্রহী হন না।
জাতীয় সংসদে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের ব্যাপারে যেসব মন্তব্য উঠে এসেছে, সেগুলোর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করার সুযোগ কম। উল্লেখ্য, দেশের ২১ উপাচার্যের বিরুদ্ধে তদন্ত করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এসব তদন্তে পাওয়া গেছে তারা স্বজনপ্রীতি করেছেন; নিয়োগ, ভবন নির্মাণ ও কেনাকাটায় দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
এছাড়া কারও কারও বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচার ও নারী কেলেঙ্কারিসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগও রয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ ওঠা নিঃসন্দেহে দুঃখজনক। বর্তমানে দেশে দুর্নীতির বিস্তার প্রায় সর্বব্যাপীই বলা চলে।
কিন্তু তাই বলে উপাচার্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। জ্ঞানের আলোয় সমাজকে আলোকিত করার মহৎ দায়িত্বে নিয়োজিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পদবিধারী উপাচার্যরা যদি অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হন, তাহলে জাতির ভরসা করার আর জায়গা থাকে কোথায়?
বর্তমানে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ও শিক্ষক ছাড়াও নিয়োগ প্রক্রিয়ার অধিকাংশই সম্পন্ন হয় দলীয় বিবেচনায়। দেখা যায়, নিয়োগপ্রাপ্তরা দলের প্রয়োজনে বেপরোয়া ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়াসহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজে জড়িত হতেও দ্বিধা করেন না। অন্যদিকে অলাভজনক ও সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান হিসাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কার্যক্রম পরিচালনার কথা থাকলেও অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম, ভর্তি ও সনদ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে।
বস্তুত দেশে শিক্ষাব্যবস্থার বিভিন্ন স্তরসহ উচ্চশিক্ষার স্তরটিতেও বিরাজ করছে নানা অনিয়ম-অব্যবস্থা-অসঙ্গতি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় দলনিরপেক্ষ, শিক্ষানুরাগী, প্রখর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, উন্নত রুচি ও মন-মানসিকতার অধিকারী সুপণ্ডিত এবং শিক্ষা ও শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষক-উপাচার্য নিয়োগের ব্যাপারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা গেলে অরাজকতার অবসান ঘটবে বলে মনে করি আমরা।