প্রাথমিক স্তরের নতুন শিক্ষাক্রম
কোনোরকম অনিশ্চয়তা কাম্য নয়
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২২, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
নতুন শিক্ষাক্রম ও পাইলটিংয়ের ব্যাপারে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা থাকার পরও প্রাথমিক স্তরের নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়নে কেন তা অনুসরণ করা হলো না, তা বোধগম্য নয়। সাধারণত শিক্ষাক্রম অনুমোদনের আগে সেটির পরীক্ষামূলক প্রয়োগ বা পাইলটিং করার রীতি রয়েছে। এতে ভুলত্রুটি চিহ্নিত হয় এবং সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনে তা চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়। অথচ প্রাথমিক স্তরের নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ এ ধাপটি পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে; উপরন্তু এক্ষেত্রে জাতীয় শিক্ষাক্রমের রূপরেখাও (এনসিএফ) বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন ছাড়াই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটি (এনসিসিসি) কিসের ভিত্তিতে সেটির অনুমোদন দিয়েছে, এ প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।
যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ ব্যতিরেকে প্রাথমিক স্তরের নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়নের বিষয়টিকে ‘ঘোড়ার আগে গাড়ি’ জুড়ে দেওয়ার মতো একটি বিষয় উল্লেখ করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাক্রম সমন্বয়হীন হয়ে পড়বে। এতে আগের মতোই প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের শিখনঘাটতি এবং নির্ধারিত যোগ্যতা অর্জন না হওয়ার পাশাপাশি নোটগাইড ও কোচিংনির্ভরতা বেড়ে যাবে। তাছাড়া আকস্মিকভাবে মাধ্যমিকে নতুন শিক্ষাক্রমের মুখোমুখি হওয়ায় অনেকেরই খেই হারিয়ে ফেলার আশঙ্কা রয়েছে এবং এ কারণে ঝরে পড়ার হারও বেড়ে যেতে পারে। জানা গেছে, অনুমোদনপ্রাপ্ত শিক্ষাক্রমের ওপর সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কর্মশালায় উপস্থিত শিক্ষাবিদসহ শিক্ষাক্রম ও মূল্যায়ন বিশেষজ্ঞরা প্রাথমিকের প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রমটি জাতীয় রূপরেখার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে মত দিয়েছিলেন। বস্তুত প্রাথমিকের শিক্ষাক্রম আরও বেশ কয়েকটি দিক থেকে রূপরেখার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন প্রক্রিয়া। অনুমোদিত শিক্ষাক্রমে ‘যোগ্যতাভিত্তিক শিখনে’র কথা বলা হয়েছে। এটি অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখনের একটি অংশমাত্র। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, প্রাথমিকের এই শিক্ষাক্রমে সক্রিয় শিখনের ফলে লক্ষ্য অর্জিত হবে না; বিশেষ করে জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ সমন্বিত উপায়ে বাস্তবে প্রয়োগ করে অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ কমে যাবে।
মূল্যায়ন ও শিখন পদ্ধতিতে বড় রকমের পরিবর্তন এনে শিক্ষাক্রমের রূপরেখা তৈরি ও তা অনুমোদন করেছে সরকার। সে অনুযায়ীই শিক্ষাক্রম প্রণীত হওয়ার কথা। এর ফলে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যক্রম বদলে যাবে। এ অবস্থায় পাইলটিং করে ফিডব্যাকের ভিত্তিতে পরিবর্তন সাপেক্ষে শিক্ষাক্রম অনুমোদন করা যৌক্তিক ও বিজ্ঞানসম্মত। অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষাক্রমের রূপরেখা তৈরির সূচনাকাল থেকেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দেখা দিয়েছিল, যা অপনোদনের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এ কারণেই বর্তমানে সমন্বয়হীনতার বিষয়টি প্রকটভাবে দৃশ্যমান হচ্ছে, যা মোটেই কাম্য নয়। আমরা মনে করি, সার্বিকভাবে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাক্রম নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা থেকে অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে সমন্বয়হীনতার কারণে রূপরেখার লক্ষ্য পূরণ যাতে বিঘ্নিত না হয়, সেদিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি।