আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি
দক্ষতার সঙ্গে অবস্থার উন্নতি ঘটাতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৭ মার্চ ২০২২, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রতীকী ছবি
রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি অনভিপ্রেত। ঢাকার মতিঝিলে ফিল্মি কায়দায় পেশাদার কিলার বাহিনীর গুলিতে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু ও বদরুন্নেছা কলেজের ছাত্রী সামিয়া আফরিন প্রীতি হত্যার রেশ কাটতে না কাটতেই শেওড়াপাড়া এলাকায় সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে ‘গরিবের ডাক্তার’ খ্যাত আহমেদ মাহি বুলবুল নামে এক দন্তচিকিৎসক নিহত হয়েছেন। পাশাপাশি সবুজবাগের একটি বাসায় দুই শিশু সন্তানের মুখে স্কচটেপ পেঁচিয়ে তাদের মা মুক্তা আক্তারকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। খোদ রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এমন অবনতিতে সংগত কারণেই দেশবাসী উদ্বিগ্ন। বস্তুত হত্যা, ছিনতাই, ধর্ষণসহ অন্যান্য অপরাধে যুক্তদের আইনের আওতায় আনতে না পারার ব্যর্থতার কারণেই রাজধানীসহ সারা দেশে হত্যা-নৈরাজ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ধারাবাহিকতায় অপরাধীরা যাতে বেপরোয়া হয়ে না ওঠে, সেদিকে মনোযোগ দেওয়া দরকার।
অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে কোনো মা-বাবা যখন সন্তানহারা হয়, স্ত্রী হয় স্বামীহারা কিংবা বোন হয় ভাইহারা, তখন তাদের দীর্ঘশ্বাসে চারপাশের বাতাস নিঃসন্দেহে ভারি হয়ে ওঠে। মূলত হত্যা, নৈরাজ্য ও বিশৃৃঙ্খলা থেকে সমাজ ও দেশের মানুষকে সুরক্ষার জন্যই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্ভব ঘটেছে। মানুষ তাই সংগত কারণেই এ বাহিনীর কাছ থেকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা প্রত্যাশা করে। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে দায়বদ্ধতা রয়েছে, তা যথাযথভাবে পরিপালন হওয়া উচিত। বলার অপেক্ষা রাখে না, নৃশংস হত্যাকাণ্ডসহ অন্যান্য অপরাধের মাত্রা কমাতে হলে প্রথমে এর পেছনে থাকা কারণগুলো চিহ্নিত করে তা নিরসনের উদ্যোগ নিতে হবে। খুনসহ অন্যান্য অপরাধের ঘটনা যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে হত্যাকাণ্ডসহ অন্যান্য সামাজিক অপরাধ কমে আসবে-এতে কোনো সন্দেহ নেই। অবশ্য আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠাও জরুরি। দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকার ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা অন্যতম শর্ত হলেও দুঃখজনক হলো, রাষ্ট্রে তার ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। জাতীয় সংসদে কার্যকর কোনো বিরোধী দল নেই। সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দল না থাকলে সরকারের ভুলক্রটিগুলো চিহ্নিত করার মতো কেউ থাকে না। তখন এর সুযোগ নিয়ে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে সমাজে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দেওয়ায় দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়, যা মোটেই কাম্য নয়। অপরাধ বিজ্ঞানী, সমাজ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের গবেষক, বিচারপতি, আইনজীবী এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করেন, দেশে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির চারটি সুস্পষ্ট কারণ রয়েছে। এগুলো হলো-ক্রাইম ম্যাপিংয়ে ‘হট স্পট’ চিহ্নিত না করা; খুনি বা অপরাধীকে ভয় দেখানোর ক্ষেত্রে ব্যর্থতা, দুর্বল মামলা এবং তদন্ত রিপোর্ট ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির অভাব। এছাড়া রাজনৈতিক প্রভাবে শাস্তি এড়িয়ে যাওয়ার সংস্কৃতিও একটি বড় কারণ বলে মনে করা হয়। এ কারণে একদিকে যেমন অপরাধীদের গায়ে হাত দেওয়া যাচ্ছে না; অন্যদিকে গ্রেফতার হলেও তাদের আটকে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। সমাজ থেকে অপরাধ নির্মূলে অপরাধ, সমাজ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের গবেষক, বিচারপতি, আইনজীবী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা যেসব সুপারিশ রেখেছেন, তা আমলে নিয়ে রাজধানীসহ সারা দেশে হত্যা-খুনসহ অন্যান্য অপরাধ ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির নিরসনকল্পে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।