বিমা খাত নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ভাবনা
সবাই অনুপ্রাণিত হোক
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২২, ০১:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় বিমা দিবস-২০২২’ উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বিমাসংক্রান্ত বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, দেশের সবকিছুই যখন ডিজিটাল করা হচ্ছে, তখন বিমা খাতকেও সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড করে অটোমেশনে আনতে হবে। গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে সরকার ‘ইউনিফাইড মেসেজিং সিস্টেম’ (ইউএমপি) পদ্ধতি চালু করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রাহকদের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিমাসেবা দিতে হবে।
তিনি বলেন, গ্রাহকরা যাতে তাদের বিমা দাবি সঠিক সময়ে কোনো ঝামেলা ছাড়াই পেতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। বিমাকে ‘জনগণের আমানত’ হিসাবে আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নত বিশ্বের মতো বিমাব্যবস্থা আমাদের দেশেও চালু হোক, এটাই আমরা চাই। নতুন নতুন প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, প্রিমিয়াম দেওয়া বা অন্য কোনো বিষয় অনলাইনে অন্তর্ভুক্ত করা গেলে সবার জন্য সুবিধা হবে এবং এতে সবাই আগ্রহী হবে। থার্ড পার্টি ইন্স্যুরেন্সকে প্রতারণামূলক কাজ হিসাবে উল্লেখ করে তা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এটিকে ধোঁকাবাজি বলেছেন তিনি।
বিমাব্যবস্থা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী যেসব কথা বলেছেন, তা নিঃসন্দেহে প্রণিধানযোগ্য। এটি অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই, বিমার গ্রাহক শ্রেণির একটি বড় অংশ সঠিক সময়ে এবং ঝামেলাবিহীন অবস্থায় তাদের দাবিকৃত টাকা পান না। নানারকম অজুহাত দেখিয়ে বিমার টাকা দেওয়ার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করা হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে গ্রাহক তার দাবিকৃত টাকা ঠিকমতো বুঝে পান না। এটা নিশ্চয়ই প্রতারণার শামিল।
বিমার টাকাপ্রাপ্তির দীর্ঘসূত্রতার কারণে অনেকে যে বিমাবিমুখ হয়ে পড়েন, তা বলাই বাহুল্য। গ্রাহকের বিমার টাকা নিয়ে এই ছিনিমিনি খেলা বন্ধ করতে হবে। তবে এটাও ঠিক, কখনো কখনো গ্রাহকরাও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে থাকে। পাটের গুদাম থেকে পাট সরিয়ে সেখানে আগুন লাগিয়ে বিমার টাকা আদায় করা হয়েছে, এমন দৃষ্টান্ত অনেক।
গার্মেন্ট খাতেও আগুন ধরিয়ে বিমার টাকা আদায় করা হয়েছে। বিমার এই মিথ্যা দাবির বিষয়ে বিমা কোম্পানিগুলোকে সতর্ক থাকতে হবে অবশ্যই। বস্তুত, বিমা কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ও গ্রাহক-দুই পক্ষই যদি সততা ও আন্তরিকতার পরিচয় না দেয়, তাহলে বিমাশিল্প যথাযথভাবে বিকশিত হতে পারবে না।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। বলেছেন, দেশের সব নাগরিক ও সম্পদকে বিমার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। নাগরিক ও সম্পদের নিরাপত্তার প্রশ্নে এটি এক জরুরি কাজ বলে মনে করি আমরা। উল্লেখ করা যেতে পারে, উন্নত দেশগুলোয় প্রত্যেক নাগরিকই বিমার আওতায় থাকেন। সেখানে কর প্রদান ও বিমার আওতায় থাকা-এ দুটি বিষয় বাধ্যতামূলক। এই ধারায় আমাদেরও পথ চলতে হবে।
প্রধানন্ত্রী বিমা খাতকে ডিজিটালাইজড করার যে কথা বলেছেন, তা-ও প্রতিপালন করতে হবে। এটা সময়ের দাবি বইকি। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিমা খাত ডিজিটালাইজড করা হলে বিমাসংক্রান্ত যাবতীয় কর্মকাণ্ড সহজতর হবে এবং সাধারণ মানুষ এতে আকৃষ্ট হবে। আমরা আশা করব, বিমা খাত নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে এ খাতসংশ্লিষ্ট সবাই অনুপ্রাণিত হবেন এবং সেভাবে এই শিল্পের উৎকর্ষ সাধিত হবে।