বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী নির্যাতন
গেস্টরুম অপসংস্কৃতির অবসান জরুরি

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২২, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে গত পাঁচ মাসে ১৮ শিক্ষার্থী শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া পাঁচজন সাংবাদিকও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছে ‘স্টুডেন্টস অ্যাগেইনস্ট টর্চার’ নামে মানবাধিকারবিষয়ক শিক্ষার্থীদের একটি প্ল্যাটফরম। সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে, এটি অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নির্যাতনের হার সবচেয়ে বেশি আবাসিক হলগুলোর গেস্টরুম বা অতিথিকক্ষে। বস্তুত বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গেস্টরুম নির্যাতন’ অপসংস্কৃতি নতুন নয়। জানা যায়, প্রতিটি হলে অতিথিদের জন্য রয়েছে গেস্টরুম। রাতে এসব গেস্টরুমেই অনেক শিক্ষার্থী লাঞ্ছিত ও নির্যাতিত হচ্ছেন। অন্য এক তথ্যমতে, গত তিন মাসে বিভিন্ন হলে কমপক্ষে ৩০ জন শিক্ষার্থী গেস্টরুমে নির্যাতিত হয়েছেন। আর প্রায় সব ক্ষেত্রেই নির্যাতনকারী হিসাবে অভিযোগের আঙুল উঠেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী নামধারীদের বিরুদ্ধে। আরও অভিযোগ, এসব ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ একরকম নীরব ভূমিকা পালন করে চলেছে।
ভুক্তভোগী সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ছাত্রলীগের রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে যোগদানে আবাসিক হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয়। তাদের কেউ সেখানে যেতে অনীহা প্রকাশ করলে তাকে ডেকে আনা হয় গেস্টরুমে। সেখানে ওই শিক্ষার্থীকে জবাবদিহি করতে হয়। কৃত ‘অপরাধের’ খেসারত হিসাবে গভীর রাতে তাকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়। কখনো কখনো মারধরও করা হয়। সবচেয়ে বড় যে অপকর্মটি করা হয় তা হলো, কেউ গেস্টরুমে যেতে অনীহা প্রকাশ করলে তাকে ‘শিবির’ অপবাদ দিয়ে হল ছাড়তে বাধ্য করা। বস্তুত এমন ঘটনা যে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটছে তা নয়, অন্য বিশ্ববিদ্যালয়েও ঘটছে। গতকালই যুগান্তরে খবর বেরিয়েছে, ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের গ্রুপভিত্তিক রাজনীতি না করায় তার ওপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছে ওই সংগঠনের নামধারী নেতাকর্মীরা। এক্ষেত্রেও তাকে জোরপূর্বক বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা চালানো হয়েছে।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর এ ধরনের আচরণ কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তো বটেই, সরকারের প্রতিও আহ্বান জানাব তারা যেন এ ধরনের নির্যাতনকারীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উচিত তাদের সংগঠনের স্বার্থেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় গেস্টরুমে নির্যাতনের যে অপসংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, তার অবসান ঘটাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।