আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট
প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম গতিশীল করতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০১:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বাংলা ভাষার প্রচার-প্রসারসহ পৃথিবীর সব ভাষা সংরক্ষণ, গবেষণা ও বিকাশের লক্ষ্যে ১১ বছর আগে রাজধানীতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হলেও প্রতিষ্ঠানটির মূল কাজের অগ্রগতি হতাশাজনক।
জানা যায়, প্রতিষ্ঠাকালে এ ইনস্টিটিউটের জন্য ২৩টি কাজ নির্দিষ্ট করা হয়েছিল, যার মধ্যে এ পর্যন্ত মাত্র পাঁচটি পুরোপুরি এবং কয়েকটি আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম প্রধান কাজ ছিল দেশে-বিদেশে বাংলা ভাষার প্রচার ও প্রসারে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ, পাশাপাশি বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিকীকরণে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া।
কিন্তু এসব ব্যাপারে আজ পর্যন্ত নেওয়া হয়নি উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ। বাংলা ভাষাসহ দেশের বিভিন্ন ভাষা নিয়ে গবেষণার যে কাজ করার কথা, তাতেও প্রতিষ্ঠানটি সফল হয়নি। গত ১১ বছরে মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের একমাত্র বড় কাজ নৃ-ভাষা বিষয়ে বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা। বস্তুত কিছু সেমিনারের আয়োজন, স্মরণিকা ও নিউজলেটার প্রকাশ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির উল্লেখযোগ্য কোনো কাজ নেই। বিষয়টি দুঃখজনক।
জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো) ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ঘোষণা করে। এটি আমাদের জন্য একটি বিশেষ মর্যাদার বিষয়। ইউনেস্কোর এ ঘোষণার পর সরকার দেশে একটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা চর্চা ও গবেষণাকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্তটি যে সময়োচিত ছিল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এরই অংশ হিসাবে গড়ে তোলা হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম গতিশীল না হওয়ায় এটি এখনো গবেষক ও দশনার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠেনি। অথচ এ প্রতিষ্ঠানে কাজের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার বিবর্তন, বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া ভাষা এবং তা বিলুপ্তির কারণ, বিপন্নপ্রায় ভাষাগুলো রক্ষা ও সংরক্ষণ ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণায় এ ইনস্টিটিউট বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। এমনকি ভাষা বিষয়ে শিক্ষার ক্ষেত্রেও রাখতে পারে ভূমিকা। আর এসবের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের পরিচিতি ও সুনাম বৃদ্ধিতেও অবদান রাখতে পারে। তাই এ প্রতিষ্ঠানের দিকে সরকারের বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি প্রতিষ্ঠান। জানা যায়, প্রতিষ্ঠার পর প্রথম কয়েক বছর এ ইনস্টিটিউটে জনবল সংকট ছিল। তবে সম্প্রতি ১৯ জনের নিয়োগে এ সংকট কিছুটা কমেছে। আমরা বলব, প্রয়োজন হলে জনবল আরও বাড়ানো হোক। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি যেন নিষ্ক্রিয় না থাকে, গতিশীল হয়।