Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

ভোগ্যপণ্যের চাহিদায় গরমিল

প্রয়োজন সুষ্ঠু খাদ্যশস্য ব্যবস্থাপনা

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০১:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ভোগ্যপণ্যের চাহিদায় গরমিল

ফাইল ছবি

ভোগ্যপণ্যের বাজারে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্য থাকার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চাহিদামতো পণ্যের সরবরাহ না থাকলে সংকট হয়ে ওঠে অনিবার্য। তাই দেশে যাতে ভোগ্যপণ্য, বিশেষত খাদ্যপণ্যের সংকট সৃষ্টি না হয় এবং বাজারে কোনো পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি না ঘটে, সেজন্য পণ্যের চাহিদা সম্পর্কে সঠিক তথ্য থাকা জরুরি।

চাহিদা সম্পর্কে সঠিক তথ্য থাকলে সে অনুযায়ী খাদ্যশস্য উৎপাদন করে এবং আমদানিকৃত পণ্যের ক্ষেত্রে তা পর্যাপ্ত আমদানি করে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হয়। নয়তো বাজারে এর নানা বিরূপ প্রভাব পড়ে। বর্তমানে দেশে তেমনটিই লক্ষ করা যাচ্ছে।

প্রায়ই বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের ঘাটতি বা সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে দাম বাড়ছে খাদ্যপণ্যের অথবা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। কাজেই এদিকে দৃষ্টি দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

বস্তুত দেশে একটি সুষ্ঠু খাদ্যশস্য ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে খাদ্যশস্য উৎপাদনের এবং এসব পণ্যের মাথাপ্রতি ভোগের সঠিক তথ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। এসবের প্রকৃত তথ্য না থাকলে নীতিনির্ধারকদের পক্ষে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব নয়।

প্রকৃত তথ্যের অভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত না নেওয়া গেলে খাদ্যশস্য ব্যবস্থাপনা চ্যালেঞ্জের মুখে থেকে যাবে, যা মোটেই কাম্য নয়। খাদ্যপণ্যের প্রকৃত চাহিদা জানার জন্য প্রয়োজন দেশের জনসংখ্যার প্রকৃত হিসাব। প্রতিবছর জনসংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে খাদ্যসহ ভোগ্যপণ্যের চাহিদা। এজন্য নির্দিষ্ট সময় পরপর আদমশুমারি হওয়া উচিত।

দেশে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী পাঁচ বছর পরপর এ শুমারি হওয়ার কথা। অথচ গত ১০ বছরে দেশে কোনো আদমশুমারি হয়নি, সর্বশেষ আদমশুমারি হয়েছিল ২০১১ সালে। অর্থাৎ ভোগ্যপণ্যের সঠিক চাহিদা নিরূপণের ক্ষেত্রে একটি সমস্যা রয়েই গেছে। দ্বিতীয়ত, ভোগ্যপণ্যের নিরূপিত চাহিদা নিয়ে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে রয়েছে মতভেদ।

উদাহরণস্বরূপ, কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে দেশে চালের উৎপাদন ছিল ৩ কোটি ৮৭ লাখ টন। আর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে চালের প্রকৃত উৎপাদন ছিল ৩ কোটি ৬৬ লাখ টন। অর্থাৎ বিবিএসের হিসাবের সঙ্গে ডিএইর হিসাবের পার্থক্য ছিল প্রায় ২১ লাখ টন।

সে সময় স্বয়ং খাদ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ডিএইর হিসাবের এ গরমিলের কারণে সঠিক সময়ে চাল আমদানি করতে পারেনি সরকার।

বস্তুত দেশে খাদ্যপণ্যের সঠিক চাহিদার যেমন হিসাব নেই, তেমনি নেই উৎপাদনের সঠিক তথ্যও, যা সরকারের এ সংক্রান্ত পরিকল্পনা গ্রহণের পথে বড় বাধা। এতে যে কোনো মন্ত্রণালয়ের পক্ষে কার্যকর সিদ্ধান্ত নেওয়া বা আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

খাদ্যশস্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় একদিকে যেমন প্রয়োজন দেশে উৎপাদিত খাদ্যশস্যের সঠিক তথ্য, তেমনি অন্যদিকে দরকার এসব পণ্যের জনপ্রতি ভোগের সঠিক হিসাব। দেশের মানুষের খাদ্য চাহিদা তথা জনসংখ্যার সঠিক হিসাব নিরূপণে সরকার নিয়মিত আদমশুমারির পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি একটি সুষ্ঠু খাদ্যশস্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলবে, এটাই কাম্য।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম