Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

ঢাবির ‘গেস্টরুম নির্যাতন’ সংস্কৃতি

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২২, ০১:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঢাবির ‘গেস্টরুম নির্যাতন’ সংস্কৃতি

ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাধারণ ছাত্ররা কি স্বাভাবিক শিক্ষাজীবনযাপন করতে পারছেন? উত্তর হচ্ছে-সাধারণ ছাত্রসমাজের একটি বড় অংশ তা পারছে না। তারা শারীরিক নির্যাতনসহ নানা ধরনের অনাচারের শিকার হচ্ছেন। আর এই অনাচার করে চলেছে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর একাংশ। ঢাবির প্রতিটি হলে অতিথিদের জন্য রয়েছে গেস্টরুম। রাতে এসব গেস্টরুমেই অনেক শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দ্বারা লাঞ্ছিত ও নির্যাতিত হচ্ছেন।

এক হিসাবে গত তিন মাসে বিভিন্ন হলে কমপক্ষে ৩০ জন শিক্ষার্থী গেস্টরুমে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে নির্যাতন হয়েছেন। আর এসব ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ একরকম নীরব ভূমিকা পালন করে চলেছে। উল্লেখ্য, ৮টি নির্যাতনের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মাত্র একজন ছাত্রলীগ কর্মীকে শাস্তি দিতে পেরেছে।

ভুক্তভোগী সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছাত্রলীগের রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে যোগদানে আবাসিক হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয়। তাদের কেউ সেখানে যেতে অনিচ্ছা প্রকাশ করলে তাকে ডেকে আনা হয় গেস্টরুমে। সেখানে সেই শিক্ষার্থীকে জবাবদিহি করতে হয়। কৃত অপরাধের (!) খেসারত হিসাবে গভীর রাতে তাকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়। কখনো কখনো মারধরও করা হয়।

এছাড়াও গেস্টরুমে প্রথম বর্ষের ছাত্রদের সবক দেওয়া হয় কীভাবে ছাত্রলীগের সিনিয়রদের সালাম দিতে হবে, সমীহ করতে হবে। সবচেয়ে বড় যে অপকর্মটি করছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের একাংশ তা হলো, কেউ গেস্টরুমে যেতে অনীহা প্রকাশ করলে তাকে ‘শিবির’ অপবাদ দিয়ে হল ছাড়তে বাধ্য করা। কোনো শিক্ষার্থীর ফেসবুকে প্রকাশিত কোনো মন্তব্য যদি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের পছন্দ না হয়, তাহলেও তাকে নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এমন এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা পড়তে আসেন। তাদের অনেকেই গরিব পরিবারের সন্তান। এসব শিক্ষার্থী যখন বিভিন্ন অপবাদ মাথায় নিয়ে তাদেরই সতীর্থদের হাতে নির্যাতিত হন, তখন তাদের ও তাদের পরিবারের দুঃখের সীমা থাকে না। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা তাদের ওপর নির্যাতনের কথা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানাতেও ভয় পান, পাছে তারা হলের সিট হারানোসহ আরও বড় নির্যাতনের শিকার হন। আমরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের এমন আচরণের তীব্র নিন্দা জানাই। আমাদের মনে আছে-বুয়েটের এক নির্দোষ ছাত্র আবরারকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কীভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছিল। সেই হত্যা মামলায় অনেকের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলেও সেখান থেকে ঢাবির ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের একটি অংশ কোনো শিক্ষাই গ্রহণ করেনি। একটি ছাত্র সংগঠনের দায়িত্ব হচ্ছে সাধারণ ছাত্রদের অভাব-অভিযোগের প্রতিকারে এগিয়ে আসা।

ছাত্রলীগের একটি অংশ তা তো করছেই না, উলটো তাদের নির্যাতন করছে। ক্ষমতার এই অপব্যবহার কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তো বটেই, সরকারের কাছেও আহ্বান জানাব তারা যেন ঢাবির ‘গেস্টরুম নির্যাতন’ সংস্কৃতি তৈরি করেছে যারা, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উচিত তাদের সংগঠনের বিস্তার ঘটাতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা। তাদেরকে বৈরী করে তুললে সংগঠনের বিস্তার তো ঘটবেই না, বরং তা আরও সংকুচিত হয়ে পড়বে-এই বোধ থাকা উচিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও গেস্টরুমে নির্যাতনের যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, এর অবসান ঘটাতে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে-এটাও চাইব আমরা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম