জাহাজভাঙা শিল্প
পরিবেশসম্মতভাবে লাভজনক করতে হবে

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর ২০২১, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

জাহাজভাঙা শিল্প দেশের অন্য কয়েকটি শিল্পের কাঁচামালের জোগান দেয়। বিশেষ করে রড ও ছোট জলযান নির্মাণশিল্পের কাঁচামালের অন্যতম উৎস জাহাজভাঙা শিল্প। দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়তে থাকায় এ দুটি শিল্প খাতের পরিধিও বাড়ছে। হালকা প্রকৌশল খাতের বহু সরঞ্জামও সরবরাহ হচ্ছে জাহাজভাঙা খাত থেকে। এসব কারণে জাহাজভাঙা শিল্পের প্রসারের সম্ভাবনা বাড়ছে। চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকায় গত কয়েক দশকে জাহাজভাঙা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বোঝা যায় এ ব্যবসাটি লাভজনক। তবে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে জাহাজভাঙা মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে কিছু সমস্যার কথাও জানানো হয়েছে। সংগঠনটির কর্মকর্তারা বলেছেন, জাহাজভাঙা শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের নীতি সহায়তা প্রয়োজন।
ব্যাপক ঝুঁকি এবং পরিবেশবাদীদের বিরোধিতা সত্ত্বেও জাহাজভাঙা শিল্প বিকশিত হওয়ার একটি উল্লেখযোগ্য কারণ, এ শিল্প বেশকিছু কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। গতকাল যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, করোনার প্রথম বছর অন্যান্য খাতের মতো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল জাহাজভাঙা শিল্পও। তবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে চলতি বছর কয়েক দফা লকডাউনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি এ শিল্পে। ফলে চলতি বছরের প্রথম দুই প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ ও এপ্রিল-জুন) মতো তৃতীয় প্রান্তিকেও (জুলাই-সেপ্টেম্বর) জাহাজভাঙায় শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। এ সময় দেশে আগের বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের তুলনায় ১৭০ শতাংশ বেশি জাহাজ ভাঙা হয়। বেলজিয়ামভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘শিপ ব্রেকিং প্ল্যাটফরমের সর্বশেষ প্রান্তিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ২০২১ সালের তৃতীয় প্রান্তিকের তথ্যের ভিত্তিতে সম্প্রতি এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। গত বছর জাহাজভাঙায় পরিমাণের দিক থেকে শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ। পরিমাণের দিক থেকে টানা ছয় বছর শীর্ষস্থান ধরে রাখে বাংলাদেশ।
জাহাজ ভাঙার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের নিরাপত্তার দিকটিতে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। শ্রমিকদের কিছুটা প্রশিক্ষণ দিলেই তারা প্রযুক্তিতে দক্ষ হয়ে উঠবেন। তাদের হেলমেটও দিতে হবে। জাহাজ ভাঙার কাজে পুরোনো প্রযুক্তির পরিবর্তে আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ বাড়াতে হবে? এ কাজে নিয়োজিত যেসব শ্রমিক শারীরিক ক্ষতির শিকার হন, তাদের যথাযথ ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। যেহেতু জাহাজভাঙা শিল্পের সঙ্গে অনেক মানুষ জড়িত, তাই এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার উপায় খুঁজে বের করতে হবে। একই সঙ্গে এ শিল্পটিকে পরিবেশসম্মতভাবে লাভজনক করার উপায় খুঁজতে হবে।